পতেঙ্গা সমুদ্রতীরে প্রস্তাবিত বে টার্মিনালের বন্দর অংশের জেটি নির্মাণকাজ আগামী ডিসেম্বরের পর শুরুর কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান। এরই মধ্যে বে টার্মিনালের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া প্রায় শেষ হয়েছে। ডিটেইল ড্রইং ডিজাইন তৈরির জন্য কনসালট্যান্ট নিয়োগ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি ডিপিপি তৈরি করে জমা দেবে। এরপর মন্ত্রণালয় অনুমোদন পেলেই আমরা জেটি নির্মাণ কাজ শুরু করব।
আজ সোমবার চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৫ বর্ষপূতি দিবস। এই দিনে চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। এই উপলক্ষে গতকাল রবিবার শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে প্রচার মাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেন বন্দর চেয়ারম্যান।
করোনা মহামারির সময় চট্টগ্রাম বন্দরে আসা কনটেইনার জাহাজের ৫০ শতাংশই অন এরাইভাল বা দিনে দিনেই জেটিতে বার্থিং পেয়েছে উল্লেখ করে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘করোনার সময়ে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরে পাঁচ থেকে সাত দিন, চীনের বন্দরে ১০ থেকে ১২ দিন এমনকি ইউরোপ-আমেরিকার বন্দরগুলোতে ২০ দিনের অধিক জাহাজজট ছিল। কিন্তু আমরা সেই কঠিন চ্যালেঞ্জ খুব ভালোভাবেই সামাল দিতে পেরেছি। সেই ধারাবাহিকতা এখনো আমরা ধরে রেখেছি।’
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্মাণে দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে চলছে। সেই বন্দর ‘সাব রিজিওনাল হাব’ হিসেবে আমাদের অর্থনীতির জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনবে। চট্টগ্রাম থেকে মোংলা, পায়রায় ফিডার জাহাজ চলাচল করবে। ভারতের ভাইজাক, বিশাখাপত্নম থেকে আন্দামান পর্যন্ত এবং মিয়ানমারের বন্দর, থাইল্যান্ডের রেনং বন্দর থেকে ফুকেট বন্দর পর্যন্ত সবাই মাতারবাড়ীর সুবিধা নিতে পারবে।
চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপের আরো বেশ কটি জাহাজ সরাসরি কনটেইনার জাহাজ পরিচালনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া এর মধ্যে অন্যতম। এর বাইরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি, দুবাইয়ের একাধিক বন্দরও সরাসরি জাহাজ সার্ভিস চালুর আগ্রহ দেখিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার প্রমাণ মিলে।
পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের অগ্রগতি নিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বছরে সাড়ে চার লাখ একক কনটেইনার ওঠানামার লক্ষ্য নিয়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের নির্মাণের কাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বন্দরের এক হাজার ২২৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ৬০০ মিটার জেটিতে একসঙ্গে ১৯০ মিটার লম্বা ও সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের তিনটি কনটেইনার জাহাজ ও ২২০ মিটার লম্বা ডলফিন জেটিতে একটি তেলবাহী জাহাজ ভেড়ানো যাবে। আগামী জুলাইতে পিসিটির কার্যক্রম শুরু হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর এখন পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় বন্দর হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘বন্দর ব্যবহারকারীদের সহায়তা নিয়ে আমরা একে একটি পেপারলেস বন্দরে রূপান্তর করতে চাই। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে আমরা ২০০ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানোর পদক্ষেপ নিচ্ছি। পোর্ট লিমিট বাড়ানোর পরও আমরা বন্দরকে জিরো পাইরেসি বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে আন্তর্জাতিক মহলে সুনাম কুড়িয়েছি।’
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ডের নির্দেশনা মানতে বন্দরের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতেই আমরা নিজস্ব তহবিল থেকেই দুটি স্ক্যান মেশিন কেনার উদ্যোগ নিয়েছি। তাদের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে স্ক্যান মেশিন কিনতে না পারলে আমরা বিপদে পড়ব। কিন্তু এই কেনা নিয়ে অহেতুক সমালোচনা হচ্ছে। আমরা কোনো নির্দিষ্ট কম্পানি, নির্দিষ্ট দেশকে এই কেনার কাজ দিচ্ছি না। পিপিআর গাইডলাইন অনুসরণ করেই এই কাজটি করা হচ্ছে। সেখানে যারা কাজ পায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই তারা সরবরাহ দিবে।’
বন্দরের দুই বছরের কর্মকাণ্ড নিয়ে পাওয়ার প্রেজেন্টেশন দেন বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমোডর মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সদস্য (অর্থ) কামরুল আমিন।
Leave a Reply