রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার পাগলাপীরে সলেয়াসার বাজার নামক স্থানে বুধবার (৪ মে) রাতে মাইক্রোবাস চাপায় সিএনজিচালিত অটোর চালকসহ পাঁচ যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো তিনজন। আহতদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ মাইক্রোবাসটিকে আটক করেছে। তবে চালক পালিয়ে গেছেন জানান পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সৈয়দপুর থেকে ছেড়ে আসা মাইক্রোবাসের চালক মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তার দায়িত্বহীনতা আর দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর কারণে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বলছেন গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলেন চালকরা এ কারণে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। চালকদের গাড়ি চালানোর সময় কথা বলা বন্ধ হলে দুর্ঘটনা কমে যাবে।
নিহত পাঁচজনের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি খাড়ুয়াবাধা গ্রামের আমজাদ হোসেন (৫০), দোহাজারী ছুটহাজীপুর গ্রামের অটোচালক ছেয়াদুল ইসলাম (৪০), গঙ্গাচড়ার বেতগাড়ি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) ও তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫)। অন্য একজনের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি। নিহতদের মরদেহ তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থালে নিহত তিনজন পুরুষ আর রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরো দুই নারী মারা যান।
প্রত্যক্ষদর্শী আলাল মিয়া জানান, নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে একটি মাইক্রোবাস দ্রুতগতিতে পেছন থেকে অটোরিকশাটি চাপা দেয়। আর মাইক্রোবাসের চালকের কানে মোবাইল ফোন ছিল। ফলে মাইক্রোবাস চালক গাড়িটিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি। এসময় পেছন থেকে ওই মাইক্রোবাস অটোকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলে তিন যাত্রী মারা যান।
এ বিষয়ে তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মোর্শেদ জানান, নিহতদের মধ্যে দুজনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আহতদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত ৪ জনকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় আরো দুই নারী মারা যান। এদের মধ্যে অন্য দুজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা যায়।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সামসুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে আনার পথে আরো দুই নারী মারা গেছেন। আহত তিনজনকে ভর্তি করা হয়েছে। পাগলাপীরে মাইক্রোবাস-সিএনজির চালিত অটোর সংঘর্ষের ঘটনায় আহত দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক কারণ তাদের দুজনের মাথায় আঘাত লেগেছে।
অন্যদিকে, মাইক্রোবাস চাপায় সিএনজির চালিত অটোর যাত্রী নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জনতা রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক এক ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এক ঘণ্টা চেষ্টার পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে আরো জানা যায়, রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার সলেয়াসার বাজারের কাছে একটি অটোরিকশাকে পেছন থেকে একটি সৈয়দপুর থেকে ছেড়ে আসা মাইক্রোবাস চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন। এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে আরো দুই নারী মারা যান। মাইক্রোবাসটি নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে রংপুরের দিকে আসছিল। অন্যদিকে অটোরিকশাটি তারাগঞ্জের দিকে রংপুরের দিকে যাচ্ছিল।
রংপুরের গঙ্গাচড়া থানার ওসি দুলাল হোসেন জানান, মাইক্রোবাসের চালক মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তার দায়িত্বহীনতার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। মাইক্রোবাসটিকে আটক করা হলেও ড্রাইভার পালিয়ে গেছে। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে থানায় একটি ইউডি মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কেউ মামলা করেনি।
Leave a Reply