বান্দরবানের পাহাড়ি আঁকাবাঁকা সড়কগুলো বিভিন্ন জেলার সড়কের চেয়েও ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে দুর্ঘটনার প্রবণতা বেশি। আঁকাবাঁকা সড়কে প্রায় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান স্থানীয় যাত্রী ও পর্যটকরা। অথচ পাহাড়ের এসব ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে চলছে লক্কড়ঝক্কড় বাস। মেয়াদোত্তীর্ণ বাসে রং লাগিয়ে যাত্রী বহন করা হচ্ছে বছরের পর বছর। মাঝেমধ্যে এসব বাসের কারণে ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাসচালকের বেশিরভাগের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। আবার যাদের লাইসেন্স আছে তাদের অনেকের লাইসেন্সের মেয়াদোত্তীর্ণ। অধিকাংশ বাসের বৈধ কাগজপত্র নেই। বিশেষ করে বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের যাত্রীবাহী বাসের অবস্থা বেহাল। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে চলছে বাসগুলো। দুর্ঘটনার পর যাত্রীদের ধোঁকা দিতে রং লাগিয়ে বাসগুলো আবারও সড়কে নামানো হয়। সেই সঙ্গে বছর বছর এসব বাসে রং করা হয়।
বান্দরবান বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে চালক-হেলপার ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে গেছে, বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কে পূবালী, শাহ আমিন ও সোমাইয়াসহ বেশ কয়েকটি লোকাল বাস চলাচল করে। সাত-আট বছর আগে এসব বাসের ৯০ শতাংশের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। তারপরও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর সড়কে চলছে।
জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে মাসিক টোকেন নিয়ে চলছে বাসগুলো। প্রতিটি বাস থেকে মাসে এক হাজার টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ ও কাগজপত্র না থাকা সত্ত্বেও বাসগুলোর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এমনকি জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে এসব বাসের কাগজপত্র যাচাই করে না। ড্রাইভিং লাইসেন্সও দেখে না। এ সুযোগে অদক্ষ চালকদের দিয়ে চালানো হচ্ছে বাস। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানি। অথচ দুর্ঘটনার কয়েকদিন পরই রং লাগিয়ে বাসগুলো সড়কে নামানো হয়।
স্থানীয়রা জানান, এসব বাস প্রায়সময় মাঝপথে অকেজো হয়ে যায়। বিভিন্ন সময় ছোটবড় গাড়িকে ধাক্কা দেয়। দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেকে নিহত হন। এরপরও কোনও বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
বান্দরবান শহরের আবদুর রহিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই এই বাসগুলো দেখছি। ২০-২৫ বছরেও কোনও বাস পরিবর্তন হয়নি। বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনায় অনেক মানুষকে মারা যেতে দেখেছি। জরাজীর্ণ অবস্থায় সড়কে চলছে বাসগুলো। কয়েকদিন পর রং করে আবারও সড়কে নামানো হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চালক জানিয়েছেন, ৯০ শতাংশ বাসই মেয়াদোত্তীর্ণ। ২৫-৩০ বছর আগের এসব বাস। একটিরও কাগজপত্র ঠিক নেই। বেশিরভাগ চালকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। যাদের আছে তাদের বেশিরভাগের মেয়াদোত্তীর্ণ। এর মধ্যে অনেকে জাল শিক্ষাগত সনদ দিয়ে নিয়েছেন ড্রাইভিং লাইসেন্স। টোকেনের ভিত্তিতে ট্রাফিক বিভাগের লোকজনকে মাসিক চাঁদা দিয়ে সড়কে চলাচল করছে বাসগুলো। ট্রাফিক বিভাগকে ম্যানেজ করেন গাড়ির মালিকরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবানের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই, প্রশাসন) মো. নুরুল আফসার মাসিক টোকেন দিয়ে চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান।
তিনি বলেন, বান্দরবান বাসস্ট্যান্ডে তিনটি ব্রিজের কাজ চলছে। যার কারণে দীর্ঘদিন কোনও গাড়ির কাগজ কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স যাচাই করতে পারিনি। কবে নাগাদ গাড়িগুলোর কাগজ কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স যাচাই করতে পারবেন সে বিষয়ে কিছুই বলেননি নুরুল আফসার।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সবগুলো বাসের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেসব বাসের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে; এরপরও সড়কে চলছে সেসব বাসের মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা কয়েকদিনের মধ্যে সড়কে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেবো।’
Leave a Reply