জানা যায়, চীনের অর্থায়নে দেশটির ঠিকাদারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণকাজ চলছে। মূলত চীনের সাংহাই শহর থেকে এ প্রকল্পের অনেক পণ্য ও উপকরণ আমদানি করা হয়। সেখানেই টানেলের মালামাল প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাংহাই বন্দর থেকে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। তাই জাহাজে করে প্রয়োজনীয় এসব মালামাল ও যন্ত্রপাতি আনা যাচ্ছে না, যার প্রভাব পড়েছে টানেলের নির্মাণকাজে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) চিঠি দিয়ে প্রকল্প পরিচালকের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছে। তাদের দাবি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার প্রস্তুতি থাকা সত্তে¡ও বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে অগ্রসর হওয়া যাচ্ছে না। গত মার্চ থেকে সাংহাই বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ উল্লেখ করে প্রকল্পের ঠিকাদার তাদের অসহায়ত্বের কথা জানায়। সে অনুযায়ী যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সংশয় প্রকাশ করে গত ৮ মে সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালকের কাছে চিঠি দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। কাজ ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি সময়মতো শেষ করতে ঠিকাদারকে তাগিদ দেওয়ার কথাও চিঠিতে তুলে ধরেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
একই চিঠিতে চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণের টাকা ছাড়করণ নিয়ে সমস্যার কথাও জানানো হয়েছে। অর্থছাড়ের মেয়াদ বাড়াতে বলা হয়েছে। নতুবা প্রকল্পের কাজ প্রভাবিত হবে। দেশটির এক্সিম ব্যাংকের ঋণ ‘প্রাপ্তির সময়কাল’ আরও ছয় মাস যোগ করে ২০২৩ সালের ৬ মে পর্যন্ত বর্ধিতকরণের কথা জানিয়েছে। এ জন্য সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে দেশটির এক্সিম ব্যাংককে চিঠি দেওয়ার অনুরোধ করেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চীন তাদের ঋণের টাকা ছাড়করণের মেয়াদ না বাড়ালে প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হবে। এ জন্য ইআরডির মাধ্যমে চিঠি দেওয়া জরুরি। যদি কোনোভাবেই চীন রাজি না হয়, সে ক্ষেত্রে সরকারি অর্থায়নে কাজ এগিয়ে নিতে হবে। ঋণ জটিলতা নিয়ে গত ৮ ফেব্রæয়ারিও এ সংক্রান্ত আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে সেতু কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। তার আগে প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বৈঠকেও আলোচনা হয়।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘করোনার মধ্যে শ্রমিক ও ইঞ্জিনিয়ার সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমরা কাজ করেছি। এখনো কাজ চলছে। তাই ডিসেম্বরের মধ্যেই টানেলের কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু কিছু অসুবিধা দেখা দিয়েছে। চীনের সাংহাই বন্দর ক্লোজড আর এক্সিম ব্যাংকের এভেইবিলিটি পিরিয়ড এক্সটেনশন করা নিয়ে সমস্যা রয়ে গেছে। আমরা আশা করছি, এসবের সমাধান হলে হয়তো টার্গেট অনুযায়ী কাজ শেষ করতে পারব। তবে সব কিছু নির্ভর করছে বিদ্যমান অবস্থা থেকে উত্তরণের ওপর।’
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হার সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে। বাংলাদেশ সরকার ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকার জোগান দিচ্ছে। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। ২ হাজার ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে প্রথম টানেল টিউবের রিং প্রতিস্থাপনসহ বোরিংয়ের কাজ ২০২০ সালের ২ আগস্ট শেষ হয়েছে। এর পর ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর ২ হাজার ৪৫৯ মিটার দৈর্ঘ্যরে দ্বিতীয় টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। উৎস : আমাদের সময়।
Leave a Reply