যানজটের জন্যে দায়ী কে – যান নাকি মন? হয়তো দু’টোই দায়ী। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো – প্রধান দায়ী কে? এটা জানা দরকার এজন্যে যে, সমস্যার একদম গোড়ায় যেতে পারলে সমাধান সহজ হয়। আমার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে – মূল দায়ী আমাদের মন অর্থাৎ আমাদের মানসিকতা। যদিও সাধারণভাবে দায়ী করা হয় অপ্রশস্ত রাস্তা, সে অনুপাতে অধিক বাহন, রিকশার মত অযান্ত্রিক বাহনের অগাধ চলাচল ইত্যাদিকে।
স্বাভাবিক সিগন্যাল মেনে চললে যে সাধারণ জ্যাম আসে তা অসাধারণ হয়ে ওঠে যদি সিগন্যাল মানা না হয়। এক পাশ ছেড়ে দেয়ার আগেই আরেক পাশের বাহন চলাচল শুরু করলে মোড়ের কাছে সব বাহনের গতিই শ্লথ হয়ে আসে। অনেক ক্ষেত্রেই এমনটা দেখা যায়। আবার চার রাস্তার মোড়ে অনেক বাহন বামের রাস্তাকে আটকিয়ে স্থির অবস্থান নেয়। নিজেরা সামনে যেতে পারবে না আবার পিছনের অনেককে বামে যেতেও দিবে না। এতে পেছনে লম্বা হয় বামে যেতে চাওয়া বাহনের লাইন। উভয় ক্ষেত্রেই দায়ী আমাদের সংকীর্ণ মন, আমাদের দীন মানসিকতা।
কখনো কখনো যানজট হয় দুর্ঘটনার কারণে। বিশেষত মহাসড়কে একটি দুর্ঘটনা মানে অনিবার্যভাবে ঘন্টা দুয়েকের জ্যাম। সেইসব দুর্ঘটনার জন্যে অনেকাংশে দায়ী মোটর বাইকের চালকের বেপরোয়া মনোভাব, পথচারীদের উন্নাসিক দৃষ্টিভঙ্গি বা সুষ্ঠুভাবে রাস্তা পারাপারের যথাযথ প্রস্তুতির ঘাটতি। পথচারীদের যথাযথভাবে রাস্তা পারের জন্যে মাঝে মাঝে ওভারব্রিজে উঠতে উদ্বুদ্ধ করা হয়, কখনো কখনো বাধ্যও করা হয়। কিন্তু সেটা বেশি দিন থাকে না। তারও কারণ, মানসিকতা।
অনেক সময়ই চালকরা বাধ্য না হলে নিয়ম মানেন না। সুযোগ পেলেই নিয়ম ভেঙে বাইকের মাথা ফাঁক ফোকরে ঢুকিয়ে দেয়ার মারাত্মক বদভ্যাস আছে বাইকারদের মাঝে। এতে যে অন্য বাহনের চালক বিরক্ত হচ্ছেন, অন্যের সময় ক্ষেপন হচ্ছে এবং তার ফলে যানজট বাড়ছে, দুর্ঘটনা ঘটছে এসব বিষয়ে তারা দারুণ উদাসীন। এই উদাসীনতা আসলে হীন মানসিকতারই প্রকাশ।
যানজট নিরসনে করণীয় বলা এই লেখার উদ্দেশ্য না। ঢাকাসহ সারা দেশে নৌ-পথকে পুনর্জীবিত করে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেওয়াও নয়। শুধু এটুকু বলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাই যে, মার না খেলে যদি কথা না শুনি তো মারই খেতে হবে। গালি বকা না শুনলে যদি কাজ না করি তো গালি শুনতেই হবে। কাজেই নির্দিষ্ট মাত্রায় সচেতনতা ও নিয়ম মানার প্রতি শ্রদ্ধা প্রয়োজন সবার আগে। সেখানেও সেই মানসিকতারই বিষয়। সেই সচেতনতা ও শ্রদ্ধা শুরু করা দরকার সচেতন শিক্ষিত মহল ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকেই। পাশাপাশি, রাস্তায় চলাচলের সময় অন্যের সুযোগ সুবিধাকে অগ্রাধিকার দেয়াও জরুরি। প্রত্যেকেই অন্যের সুযোগ সুবিধাকে প্রাধান্য দিলে এবং ধৈর্য্য ধরে আইন অনুসরণ করলে যানজট অনেক কমে যাবে। চলে আসবে সহনীয় মাত্রায়। ঢাকা. ৫/৭/২০২২।
মারুফ ইবনে মাহবুব : সমাজকর্মী।
Leave a Reply