ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার দুল্লা ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষের চলাচলের তিনটি কাঁচাসড়ক স্বাধীনতার পর আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। সড়কগুলো পাকাকরণের জন্য জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিয়েই বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছেন। তবু কেউ কথা রাখেনি বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
সরেজমিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, তেঁতুলতলা, গোলাবাড়ি বাজার থেকে মান্নানের বাড়ি পূর্ব দিকে মোহাম্মদ হাজর বাড়ি পর্যন্ত তিন কিলোমিটার। হারুণ মুন্সির মোড় থেকে সামাদের মোড় পর্যন্ত এক কিলোমিটার এবং শাজাহান মণ্ডলের বাড়ি থেকে ঈমান হাজির বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার কাঁচাসড়কের বেহাল দশা। অন্যদিকে কুডেটিগী-ভারচরা, ভেদামারী-আমগীল বাজার, শলাকড়ি-দেওয়ারচালা থেকে গোলাবাড়ি পর্যন্ত প্রায় ছয় কি.মি গ্রামীণ কাঁচাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন সাত গ্রামের প্রায় ২৫-৩০ হাজার মানুষ একদিকে মুক্তাগাছা শহরে অন্যদিকে জামালপুর শহরে আসা-যাওয়া করেন।

মুক্তাগাছা শহর অভিমুখে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার, অন্যদিকে জামালপুর শহর অভিমুখে প্রায় চার কিলোমিটার পর্যন্ত গ্রামীণ তিনটি কাঁচাসড়ক থাকার কারণে বৃষ্টির দিনে মানুষের চলাচলের বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন চলাচল ও পণ্য পরিবহণের জন্য তাদের একমাত্র ভরসা মহিষ ও ঘোড়ার গাড়ি।
উপজেলার শেষ সীমানায় ইউনিয়ন হওয়ায় সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন এলাকাবাসী। গ্রামীণ কাঁচাসড়কটি পাকা করার জন্য বছরের পর বছর জনপ্রতিনিধিদের কাছে দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিয়েই বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছেন। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
প্রায় তিন যুগের বেশি সময় ধরে স্থানীয় ব্যক্তিরা এলাকার তিনটি কাঁচাসড়ক পাকাকরণের দাবি জানিয়ে আসছেন। দাবি পূরণ না হওয়ায় স্কুলশিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে ঝুঁকি নিয়েই এ কাঁচাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

স্থানীয় লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাত এলাকার হাজার হাজার মানুষ এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। এই করমর্দন পথে দিয়েই বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও ওই এলাকার ব্যাংক ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অন্যদিকে বর্ষায় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ প্রতিদিন হাজারও পথচারীকে এই পথ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়।
গোলাবাড়ির বাসিন্দা মান্নান মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কেউ কথা রাখেনি। জনপ্রতিনিধিরাও প্রতিশ্রুতি দিয়েই বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছেন। এই কাঁচারাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষক ও কোমলমতি শিশুরা।
এলাকাবাসী জানান, বৃষ্টির দিনে এই রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা। খুদে শিক্ষার্থীদের জন্য যেন এটি একটি মরণফাঁদ।
স্থানীয় দুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হোসেন আলী হুসি বলেন, রাস্তাগুলো কাঁচা থাকায় এলাকার বাসিন্দাদের চলাচলের অনেক অসুবিধা হচ্ছে। রাস্তাগুলো দ্রুত পাকা করা দরকার। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। তা ছাড়া বিষয়টি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মনসুর জানান, গ্রামের কোনো রাস্তায় কাঁচা থাকবে না। পর্যায়ক্রমে সব রাস্তায় পাকা করা হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ওই এলাকা পরিদর্শন করতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হবে।
Leave a Reply