দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার জন্য বিমান ভ্রমণের বিকল্প নেই। বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য রানওয়ের বিকল্প নেই। এমন কিছু বিমানবন্দর রয়েছে যেখানে এই দুটো কাজই করা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। এমনই একটি বিমানবন্দর নেপালের ‘লুকলা বিমানবন্দর’। এটি ‘তেনজিং-হিলারি বিমানবন্দর’ নামে বেশি পরিচিত। ২০১০ সালে হিস্ট্রি চ্যানেলের এক প্রতিবেদনে এই বিমানবন্দরকে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
লুকলা বিমানবন্দরকে মাউন্ট এভারেস্ট বেস ক্যাম্পের দিকে ট্রেক করার সূচনা পয়েন্ট বলে মনে করা হয়। আর তাই এটি বেশ জনপ্রিয়। আবহাওয়া ভালো থাকলে লুকলা ও কাঠমান্ডুর মধ্যে নিয়মিত দিনের বেলায় ফ্লাইট থাকে। মাত্র ৪০ মিনিটের দূরত্বের এই ভ্রমণ আরোহীরা বেশ উপভোগ করেন। সাধারণত লুকলাতে যখন বৃষ্টি হয়, তখন কাঠমান্ডুতে রৌদ্রজ্জ্বল দিন থাকে।
১৯৬৪ সালে নিউজিল্যান্ডের পর্বতারোহী স্যার এডমন্ড হিলারির তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয় বিমানবন্দরটি। তিনি মূলত সমতল ভূমিতে বিমানবন্দরটি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয় কৃষকরা নিজেদের জমি দিতে রাজি হননি। এরপর বর্তমান স্থানে বিমানবন্দরটি নির্মিত হয়। ২০০৮ সালে লুকলা বিমানবন্দরের নামে পরিবর্তন আনা হয়। স্যার এডমন্ড হিলারি এবং শেরপা তেনজিং নোরগের নামানুসারে এই বিমানবন্দরের নতুন নাম রাখা হয় তেনজিং-হিলারি বিমানবন্দর।
বিমান অবতরণ ও উড্ডয়নের জন্য এই বিমানবন্দরে বরাদ্দকৃত স্থানটি বেশ ছোট। পিচের আস্তরণ বিশিষ্ট রানওয়েটিতে কেবল হেলিকপ্টার ও ছোট বিমান অবতরণ করতে পারে। রানওয়েটি দৈর্ঘ্যে ৫২৭ মিটার (১,৭২৯ ফিট) এবং প্রস্থে ৩০ মিটার (৯৮ ফিট)। এটি ১১.৭ শতাংশ ঢালু।
বিমানবন্দরটির উচ্চতা ৯,৩৩৪ ফিট (২,৮৪৫ মিটার)। স্বল্প রানওয়ে ও ভূখণ্ডের কারণে এখানে বড় বিমান অবতরণ করতে পারে না। আরোহী আনা-নেওয়ার পাশাপাশি লুকলা বিমানবন্দরটি নির্মাণ সামগ্রী ও পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। লুকলা ও এর উত্তরের বেশিরভাগ গ্রামে এখান থেকে পণ্য পরিবহন করা হয়। কারণ, এই অঞ্চলে যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮,০০০ ফিট (২,৪৩৮ মিটার) উপরে অবস্থিত লুকলা বিমানবন্দর। এখানে নেই উন্নত ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম। যার ফলে প্রায়ই বিমানবন্দরটিতে দুর্ঘটনা ঘটে।
ভোরের শুরুর দিকে লুকলা বিমানবন্দরে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হয়। পাহাড়ে সূর্য উঠার প্রভাবে মধ্য থেকে শেষ সকাল পর্যন্ত বাতাস দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়। মাঝেমাঝে এখানে ক্রসউইন্ড কিংবা ঘূর্ণিবাতাস সৃষ্টি হয়। ওই সময় বিমান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এখানে বিমান চলাচলের জন্য উপযুক্ত সময় ভোরবেলা। বছরজুড়ে বিমানবন্দরটি চালু থাকলেও বর্ষা মৌসুমে এটি ৫০ শতাংশ সময়ই বন্ধ থাকে। ভিজিবিলিটি বা দৃশ্যমানতার সমস্যার কারণে এমনটা হয়ে থাকে।
Leave a Reply