দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে পাশের দেশ ভারতকে অনেক আগেই ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ। বিলম্ব হলেও বাংলাদেশকে একই সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব করেছে ভারত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে এ প্রস্তাব দেয়া হয়। ট্রানজিট সুবিধার আওতায় বিনা মাশুলে ভারতের স্থলবন্দর, বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য পরিবহন করতে পারবে বাংলাদেশ।
তৃতীয় দেশ বলতে প্রধানত নেপাল এবং ভুটানকে বুঝায়। বর্তমানে ভারতের কোনো স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর ব্যবহার করে ওই দুটি দেশে পণ্য নিতে পারে না বাংলাদেশ। নেপাল ও ভুটান ভূবেষ্টিত (ল্যান্ড লক) দেশ হওয়ায় সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের সুযোগ নেই।
ভারতের প্রস্তাবটি কার্যকর হলে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সরাসরি ওই দুটি দেশে পণ্য রপ্তানির সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ট্রানজিটের ফলে বাংলাদেশ কী লাভবান হবে?


বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এর ফলে বাংলাদেশের পণ্যবাহী ট্রাক ভারত হয়ে সরাসরি নেপাল ও ভুটানে যেতে পারবে। ফলে দেশ দুটিতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বাড়বে। তবে বাড়তি সুফল পেতে হলে রাস্তা-ঘাটসহ বন্দরের অবকাঠামো উন্নতি করতে হবে।
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ভারতের দেয়া ট্রানজিট প্রস্তাবে ভুটান থেকে তেমন সুবিধা আসবে না। সম্ভাবনার বড় জায়গা হচ্ছে নেপাল। আমাদের এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।’

বর্তমানে নেপাল ও ভুটানের পণ্যবাহী ট্রাক ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে আমদানি-রপ্তানি উভয় ধরনের পণ্য পরিবহনের সুবিধা পায়। অনেক আগেই এই সুবিধা দিয়েছে ভারত। এখন বাংলাদেশকেও একই সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব দিল ভারত।
ভারতের দেয়া প্রস্তাব কার্যকর হলে সড়কপথে বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি রেলপথেও পণ্য পরিবহন বাড়বে বলে মনে করেন আহসান মনসুর।
বিশেষ করে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি এবং বিরল সীমান্ত দিয়ে রেলপথে নেপাল এবং ভুটানে সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের সম্ভাবনা তৈরি হবে।
এ প্রসঙ্গে মনসুর বলেন, ‘এর ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে বঙ্গ থেকে নেপাল পর্যন্ত সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ তৈরি হবে।’
২০১৫ সালে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের (বিবিআইএন) মধ্যে অবাধ যান চলাচল যুক্ত হয়। ভুটান ছাড়া সব দেশ তা অনুমোদন করেছে।
ওই চুক্তির আওতায় অবাধে যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলের কথা। ইতিমধ্যে কীভাবে যান চলাচল করবে, সেই প্রটোকল এবং নিয়ম-কানুনের খসড়াও তৈরি হয়েছে। এখন ভারতের ট্রানজিট প্রস্তাবের বিষয়টি এই উদ্যোগে নতুন মাত্রা পেল।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ভারতের নতুন প্রস্তাব কার্যকর করা বাংলাদেশের জন্য পণ্য রপ্তানিতে আরও কিছু সুযোগ তৈরি হবে। তবে তার জন্য অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন করতে হবে।’
Leave a Reply