শফিকুল ইসলাম চৌধুরী কুয়েতপ্রবাসী। সেখানেই ব্যবসা করেন। করোনা মহামারির সময় তিনি দেশে আসেন। পরে গাড়ি কিনতে ধানমণ্ডির একটি শোরুমে যান। সেখানে পরিচয় হয় গাড়ি ব্যবসার নামে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার কুমিল্লার মেঘনা থানার ২ নম্বর মানিকাচর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের সঙ্গে। বেশি লাভে গাড়ি কেনার প্রস্তাব দিলে সরল বিশ্বাসে জাকিরের ফাঁদে পা দেন শফিকুল। এরপর অন্তত পাঁচ কোটি টাকা খুইয়েছেন তিনি। তাঁর মতো অনেকেই জাকিরের শিকার। সংসদ সদস্য, পুলিশ কর্মকর্তা, ইউপি মেম্বার ও বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরাও আছেন এই তালিকায়। ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে একটি গাড়িই ৩৭ জনের কাছে বিক্রি করেছেন জাকির।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এই প্রতারকের কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত জানান। গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে কুমিল্লার মেঘনা এলাকা থেকে দুটি মাইক্রোবাসসহ জাকিরকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তাঁর দেওয়া তথ্যে গত বুধবার রাত পর্যন্ত ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে ২০টি গাড়ি উদ্ধার করা হয়।জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরো ৪০টি গাড়ির বিষয়ে তথ্য দেন। সেগুলো উদ্ধারে অভিযান চলছে। পাঁচ-ছয়জনের সহযোগিতায় তিনি প্রতারণা করতেন।
ডিবি কর্মকর্তারা বলেছেন, জাকিরের বিরুদ্ধে তিন শতাধিক ভুক্তভোগীর অন্তত হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। তিনি রেন্ট-এ-কারের ব্যবসা ও সুলভ মূল্যে গাড়ি কেনাবেচার নামে প্রতারণায় জড়িত ছিলেন। প্রতারণার টাকায় তিনি গ্রামে আলিশান বাড়ি করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেতে একজনকে উপহার দিয়েছেন প্রাডো গাড়ি। নির্বাচনে খরচ করেছেন বিপুল টাকা। ঢাকায় করেছেন একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট ও গাড়ি। ছেলেকে পাঠিয়েছেন আমেরিকায়।
অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, জাকির প্রতারণা করে একটি গাড়িই ৩৭ জনের কাছে বিক্রি করেছেন। তাঁর ২০-২৫টি গাড়ি আছে। এসব গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সবাইকে দেখাতেন। একই রেজিস্ট্রেশন নম্বরের গাড়ি একাধিক জাল দলিলের মাধ্যমে বিক্রি করেছেন তিনি। এমপি ও প্রশাসনের লোকদের কাছ থেকেও টাকা হাতিয়েছেন তিনি।
ডিবি কর্মকর্তা বলেন, গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মুগদা থানায় জাকির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার মামলা করেন একজন ভুক্তভোগী। মামলাটি ডিবির তেজগাঁও বিভাগ ছায়াতদন্ত শুরু করে। তদন্তে জানা যায়, স্বল্প দামে গাড়ি কিনে দেওয়ার কথা বলে জাকির বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়েছেন। একটি গাড়ি একাধিক ব্যক্তির কাছে ভুয়া কাগজপত্র করে বিক্রি করেছেন।
তিনি আরো বলেন, জাকিরের প্রতিষ্ঠান আর কে মোটরস এবং তাঁর আত্মীয়স্বজনের নামে ২৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১২টি মামলাও রয়েছে। আরো তদন্ত করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাঁকে আবারও রিমান্ডে আনা হবে। আত্মসাৎ করা টাকা জাকির কিভাবে, কোথায় খরচ করেছেন, কী কী সম্পদ গড়েছেন সব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
Leave a Reply