এশিয়ান হাইওয়ের অংশ নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনা পয়েন্টে মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত দেশের প্রথম দৃষ্টিনন্দন ছয় লেনের ‘মধুমতি সেতু’ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে গতকাল দুপুরে সেতুটি উদ্বোধন করেন তিনি। ওইদিন রাত থেকেই গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে সেতুতে। এতে করে ভারতের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ চালু হলো। বেনাপোল থেকে ঢাকা যেতে এ পথে আর কোনো পারাপারের প্রয়োজন হবে না।
এদিকে নড়াইল প্রান্তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি, নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লুর রহমান চৌধুরী, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন, নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার সাদিরা খাতুন, সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আকতার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন খান নিলু, নড়াইল পৌরমেয়র আঞ্জুমান আরাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
‘মধুমতি’ দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) এটি। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার। নির্মিত হয়েছে টোলপ্লাজাও। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা। এশিয়ান হাইওয়ের ওপর অবস্থিত এটি। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মধুমতি সেতু’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেতুটির উদ্বোধনও করেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। সেতুর পূর্ব পাড়ে ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি উপজেলা এবং পশ্চিম পাড়ে খুলনা বিভাগের নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার কালনা পয়েন্টে সেতুটি মিলিত হয়েছে। ফলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ দুই বিভাগের সেতুবন্ধন হলো।
এরই মধ্যে সেতুর টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বড় ট্রেইলার ৫৬৫ টাকা, তিন বা ততধিক এক্সসেলবিশিষ্ট ট্রাক ৪৫০, দুই এক্সসেলবিশিষ্ট মিডিয়াম ট্রাক ২২৫, ছোট ট্রাক ১৭০, কৃষিকাজে ব্যবহূত পাওয়ার ট্রিলার ও ট্রাক্টর ১৩৫, বড় বাসের ক্ষেত্রে ২০৫, মিনিবাস বা কোস্টার ১১৫, মাইক্রোবাস, পিকআপ, কনভারশনকৃত জিপ ও রে-কার ৯০; প্রাইভেটকার ৫৫; অটোট্যাম্পো, সিএনজি অটোরিকশা, অটোভ্যান ও ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান ২৫; মোটরসাইকেল ১০ এবং রিকশা, ভ্যান ও বাইসাইকেল পারাপারে দিতে হবে পাঁচ টাকা।
বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতু নির্মিত হয়েছে। জাপানের টেককেন করপোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এর ঠিকাদার। প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, ছয় লেনের এ সেতু এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে।
Leave a Reply