জাপান থেকে ‘মালয়েশিয়া স্টার’ জাহাজে করে ৮৭২টি গাড়ি এসেছে বাংলাদেশের দুই বন্দরে। এসব গাড়ির মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩২১টি ও মোংলায় আছে ৫৫১টি। এসব গাড়ির উল্লেখযোগ্য সংখ্যকেরই ঋণপত্র (এলসি) নেই বলে অভিযোগ। তবে কতগুলোর ঋণপত্র নেই তা খতিয়ে দেখছে কাস্টমস। তিন শতাধিক আমদানিকারকের নামে আসা গাড়িগুলোর বেশির ভাগই সরবরাহ করেছেন জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী জহীর উদ্দিন। দেশে যত রিকন্ডিশন্ড গাড়ি সরবরাহ দেয়া হয় তার সিংহভাগই তার কোম্পানি ক্রস কন্টিনেন্টালের।
জাহাজটির শিপিং এজেন্ট এনসিয়েন্ট স্টিমশিপ কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক মোরশেদ হারুন বলেন, মালয়েশিয়া স্টার জাহাজে মোট ৮৭২টি গাড়ি বাংলাদেশে পৌঁছেছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে সেগুলো নামিয়ে জাহাজটি এরই মধ্যে বাংলাদেশ ছেড়েছে। গাড়িগুলোর ঋণপত্র ছিল কিনা তা যাচাইয়ের দায়িত্ব শিপিং এজেন্টের নয়। এটি কাস্টমস, ব্যাংকের মতো রেগুলেটরি বডি নিশ্চিত করবে। আমরা অনুমতি পেয়েছি বলেই জাপান থেকে গাড়িবোঝাই করেছি এবং দুই বন্দরে নামিয়েছি। আমদানিকারকরা দ্রুত ঋণপত্র জমা দিয়ে গাড়িগুলো ছাড়ের ব্যবস্থা করতে না পারলে তারা শিপিং লাইন বিএল ইস্যু করতে পারবে না। আর বিএল ইস্যু করতে না পারলে সেটি শুল্কায়নের জন্য কাস্টমসে জমা পড়বে না। শুল্কায়ন না হলে গাড়িগুলো বন্দরেই পড়ে থাকবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস তথ্য অনুযায়ী, চালানের ডকুমেন্টেসে প্রতিটিতে আমদানি ও রফতানিকারকের ঠিকানার মাঝে ঋণপত্র খোলা ব্যাংকের নামও উল্লেখ থাকে। কিন্তু এ চালানের কোনো দলিলাদিতেই এলসি খোলা ব্যাংকের নাম উল্লেখ নেই। আমদানি নীতি আদেশ অনুযায়ী, ঋণপত্র ছাড়া একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৫ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত অনুমোদিত পণ্য দেশে আনতে পারেন। যখনই বড় আকারের অর্থাৎ অনেক গাড়ি আমদানি হয়, তখন কোনোভাবেই ঋণপত্র না খুলে জাহাজীকরণের সুযোগ রাখা হয়নি আমদানি নীতিতে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার কামরুন নাহার লিলি বলেন, সব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। এর পরই প্রকৃত ঘটনা বোঝা যাবে।
নাম না প্রকাশের শর্তে বারভিডার একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এলসি ছাড়া আমদানি করা এসব গাড়ির অধিকাংশই ২০১৭ মডেলের, যা ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশে প্রবেশাধিকার নেই। তাই দ্রুত এ প্রক্রিয়ায় গাড়িগুলো আনা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমদানিকারক ও রফতানিকারকের পারস্পরিক বোঝাপোড়াতেই হয়েছে। রফতানিকারকের সঙ্গে ব্যবসায়িক বিশ্বস্ত সম্পর্ক থাকায় এলসি ছাড়াই পণ্য জাহাজীকরণ হয়েছে।
বারভিডার হিসাবে, রিকন্ডিশন গাড়ি, টায়ার, পার্টসসহ এ খাতে বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে খাতটিতে।
গাড়ি আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিলাসপণ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় শতভাগ এলসি মার্জিনের আওতাভুক্ত হয়েছে গাড়ি আমদানি। আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপের পর শতভাগ মার্জিন দিয়েও গাড়ি আমদানির ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না। বারভিডার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও ফোর হুইলার্সের কর্ণধার হাবিবুর রহমান বলেন, বিদেশী সরবরাহকারী হয়তো গাড়িগুলো বাংলাদেশে পাঠিয়েছে ঋণপত্র ছাড়াই। কিন্তু আমদানি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় সেগুলো তো বন্দর থেকে ছাড় করা হয়নি কিংবা সুযোগও নেই। এখানে আমদানি নীতির পরিপন্থী ঘটনা ঘটলে কাস্টমস জরিমানা করবে।
Leave a Reply