নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে যাত্রী ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। মালবাহী ও যাত্রীবাহী সব ধরনের নৌযান শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকাসহ ১০ দফা দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছে।
আজ সোমবার ভোরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর সদরঘাটসহ দেশের সবকটি নৌবন্দরে শ্রমিকরা কর্মবিরতির অংশ হিসেবে কাজে যোগদান থেকে বিরত রয়েছেন। যাত্রীরা জানান, আমরা জানতাম না যে, ধর্মঘট চলছে। ঘাটে এসে দেখি কোনো লঞ্চ চলছে না, তাই বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছি।
বরিশালে নিজবাড়িতে যাওয়ার জন্য সদরঘাটে এসেছেন আফসার আল হাফিজ। তিনি বলেন, সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য ঘাটে এসেছি। এখন দেখি লঞ্চ চলছে না। আজ আর বাড়ি যাওয়া হবে না।
চাঁদপুরগামী আরেক যাত্রী রোকসানা বেগম জানান, আমি ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। দুদিন বোনের বাসায় থেকেছি। বাড়িতে যাওয়ার জন্য ঘাটে এসে দেখি লঞ্চ নেই।
নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা বলছেন, আমরা অনেক দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি কিন্তু কর্তৃপক্ষ শুনছেন না। একের পর এক আশ্বাস দিয়েই যাচ্ছেন, বাস্তবায়ন কিছুই হচ্ছে না। শ্রমিকদের দাবিগুলো না মানলে ধর্মঘট চলবে।
নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক খলিলুর রহমান শনিবার সাংবাদিকদের জানান, গত শুক্রবার শ্রম দপ্তরে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে বৈঠক হয়। কিন্তু শ্রমপ্রতিমন্ত্রী তাদের দাবির বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।
শ্রমিক-মালিক সমঝোতার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত হবে জানিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামাল বাদল সাংবাদিকদের বলেন, নৌযান শ্রমিকরা ধর্মঘট করেছে কিন্তু এখন আমাদের করার কিছু নেই।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। এমনকি বন্দরের পাশে থাকা ১৭টি ঘাটে লাইটার জাহাজ থেকে পণ্য ওঠা-নামার কাজও বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিক নেতারা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। শনিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে এখন পর্যন্ত কোনো পণ্য খালাস বা ওঠা-নামার কোনো কাজই করেননি তারা।
শ্রমিকদের ১০ দফা দাবি হলো নৌ শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদানসহ সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, খাদ্য ও সমুদ্র ভাতার সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন করা, দুর্ঘটনা ও কর্মস্থলে মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা, চট্টগ্রাম থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহে দেশের স্বার্থবিরোধী অপরিণামদর্শী প্রকল্প বাস্তবায়নে চলমান কার্যক্রম বন্ধ করা, বালুবাহী বাল্কহেড ও রাতে ড্রেজার চলাচলের উপরে ঢালাও নিষেধাজ্ঞা শিথিল, নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধ, ভারতগামী শ্রমিকদের লান্ডিং পাস প্রদানসহ ভারতীয় সীমানায় সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করা, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা শতভাগ কার্যকর করে সকল লাইটারিং জাহাজকে সিরিয়াল মোতাবেক চলাচলে বাধ্য করা, চরপাড়া ঘাটে ইজারা বাতিল ও নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের অনিয়ম বন্ধ করা।
Leave a Reply