দেশে ডলারের সংকট থাকায় এলসি (ঋণপত্র) খুলতে না পেরে ছোট আকারের স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে গত এক দশকের মধ্যে চলতি বছরেই সর্বনিম্ন সাড়ে ১০ লাখ টন স্ক্র্যাপ জাহাজ বা ৬০ শতাংশ কম আমদানি হয়েছে। এর সুযোগ নিচ্ছে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বীরা, বড় সাইজের স্ক্র্যাপ জাহাজগুলো তারা কিনে নিচ্ছে। এদিকে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি কমায় ইয়ার্ডগুলো তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন হাজার হাজার শ্রমিক। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সমস্যার সমাধান না হলে বড় কিছু ইয়ার্ড ছাড়া বাকিগুলো দ্রুতই বন্ধ হয়ে যাবে।
জাহাজ ভাঙা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইকেলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) নেতারা বলছেন, চট্টগ্রামের শিপইয়ার্ডগুলোতে গত বছরের এ সময়ে প্রতি মাসে যেখানে দেড় থেকে দুই লাখ টনের বেশি স্ক্র্যাপ কাটত এবং বাজারে সরবরাহ করত, এখন সেটা ৬০-৭০ হাজার টনে নেমে এসেছে। শিপইয়ার্ডেও স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির ইতিহাসে এমন সংকট আগে কখনই আসেনি। যে জাহাজগুলো গত নভেম্বরে ইয়ার্ডে আনা হয়েছিল সেগুলো খুবই ছোট আকারের। সাধারণত আন্তর্জাতিক বাজারে যখন পুরনো স্ক্র্যাপ জাহাজের নিলাম হয় তখন বাংলাদেশ ছোট আকারের বিষয়ে খুব বেশি আগ্রহ দেখাত না। বড় জাহাজগুলোর গন্তব্যই ছিল বাংলাদেশ। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ পাকিস্তান, ভারত, তুরস্ক বা চীনের চেয়ে ভালো দাম দিয়ে সেগুলো কিনে নেয়া হতো। কিন্তু কার্যত এলসি বন্ধ থাকা এবং ডলারসংক্রান্ত জটিলতার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ এখন পিছিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ নিলামে না থাকায় কম দামে বড় জাহাজগুলো কিনে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থানও দুর্বল হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে আমদানি কমে যাওয়ায় স্ক্র্যাপ বিক্রিতেও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সম্ভাবনাময় শিল্পটি নিয়ে তাই বড় ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে উদ্যোক্তাদের মধ্যে।
বিএসবিআরএর স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরে গত ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৫৫ হাজার ৩১৪ দশমিক ৩৩ টনের ১৩৭টি জাহাজ। এর মধ্যে নভেম্বরে আমদানি হয়েছে ৫৭ হাজার টন। অথচ গত বছরের একই মাসে আমদানি হয় ২ লাখ ৪৬ হাজার ৭৩০ টন স্ক্র্যাপ জাহাজ। আর গত বছরের প্রথম ১১ মাসে ২৫ লাখ ২১ হাজার টনের বিপরীতে চলতি বছরে একই সময়ে আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৫৫ হাজার টনের মতো।
অন্যদিকে গত এক দশকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিপইয়ার্ডে সব থেকে কম স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হয় ২০১৪ সালে, ১৮ লাখ ৫০ হাজার ৫২৯ টনের ২১২টি জাহাজ। এর দুই বছরের মাথায় ২০১৬ সালে দেশের ইতিহাসে রেকর্ড ৩১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৬০ টনের ২৩৭টি জাহাজ আমদানি করা হয়েছিল। সেখানে চলতি বছরের ১১ মাসে সাড়ে ১০ লাখ টনের কিছু বেশি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করা হয়েছে, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। আগামী বছর এ শিল্পের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন শিল্পসংশ্লিষ্টরা।
একটি শিপইয়ার্ডের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমার ইয়ার্ডে ৮০০ বা হাজার টনের ছোট সাইজের স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটার কাজ চলছে। এ জাহাজ কিনতে পেরেছি তাও প্রায় চার মাস পর। বর্তমানে যে অবস্থা চলছে তাতে জানুয়ারির পর জাহাজ কিনতে পারব কিনা জানি না। সীতাকুণ্ডে আমার ইয়ার্ডের আশপাশের বেশ কয়েকটি ইয়ার্ডের কার্যক্রম এরই মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বেশকিছু চালু শিপইয়ার্ড থেকে শ্রমিক ছাঁটাই এখন সাধারণ ঘটনা।’ সূত্র : বণিক বার্তা।
Leave a Reply