বাতাসে দু’হাত ছড়িয়ে চলন্ত সাইকেলের ওপর দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। মুহূর্তেই আবার হ্যান্ডেলে হাত রেখে পা তুলে দিচ্ছেন ওপরে। সামনের চাকা ওপরে তুলে দ্রুতবেগে ছুটে চলেছেন। আবার পেছনের চাকা বাতাসে ভাসিয়ে চোখের পলকে ঘুরিয়ে ফেলছেন বাইক। সাইকেল ও মোটরসাইকেল নিয়ে এমন নানা চোখ ধাঁধানো স্টান্ট দেখিয়ে কয়েকজন তরুণ মুগ্ধ করছেন পথচারীদের। স্টান্ট শুরু হতেই দেখার জন্য জড়ো হয়ে যাচ্ছেন কয়েকশ মানুষ।
বিকেল হলেই খুলনা নগরীর বিভিন্ন স্থানে এ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও স্কুল-কলেজপড়ুয়া কিশোর ও তরুণদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল স্টান্ট। এরই ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছে কয়েকটি স্টান্ট গ্রুপ। বিভিন্ন দেশে এটি স্পোর্টস হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও এ দেশে পায়নি বলে আক্ষেপ তাঁদের।
নগরীসংলগ্ন নির্মাণাধীন ময়ূরী আবাসিক এলাকায় প্রতিদিন বিকেলেই দেখা মেলে স্টান্ট করা তরুণদের। স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন বিকেলে এখানে এসব কিশোর ও যুবক স্টান্ট করেন। এখানে ঘুরতে আসা লোকজন স্টান্ট দেখে মুগ্ধ হন। এ ছাড়া গল্লামারী লিনিয়ার পার্ক, রূপসা সেতু এলাকাসহ আরও কয়েকটি স্থানে কিশোর-যুবকরা স্টান্ট করেন।
স্টান্টে সম্পৃক্তরা জানান, নগরীতে বর্তমানে প্রায় অর্ধশত তরুণ সাইকেল স্টান্ট ও ১৪/১৫ জন মোটরসাইকেল স্টান্ট করেন। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের স্টান্ট দেখান। এর মধ্যে রয়েছে সার্ফিং স্টান্ট। এটি হলো দুই হাত ছেড়ে দিয়ে চলন্ত সাইকেলের ওপর দাঁড়ানো। আরেকটি জনপ্রিয় স্টান্ট হলো উইলি। এ ক্ষেত্রে সাইকেলের পেছনের চাকা মাটিতে থাকবে এবং সামনের চাকা থাকবে ওপরে। পেছনের চাকায় ভর করে সাইকেল চালানো হয়। রয়েছে সুইচব্যাক স্টান্ট। এটি সাইকেলের পেছনের ভাগে বসে সাইকেল চালানো। এ ছাড়া তাঁরা স্টপি, হেড স্টান্ট, সার্কেল, বার রাইড, রোলিং স্টপি, সেমি চেয়ার হুইলি ও সুইচব্যাক সার্ফিং স্টান্ট দেখাতে পারেন। স্টান্ট করার জন্য যেসব সাইকেল প্রয়োজন হয়, সেগুলোর মূল্য ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
মোটরসাইকেল স্টান্টে সম্পৃক্ত নগরীর সেন্ট যোসেফস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র অরিয়ন আহমেদ অতুল জানায়, প্রায় প্রতিদিন বিকেলে ১/২ ঘণ্টা স্টান্ট করি। এতে নিজের শখ মেটে, শারীরিক ব্যয়াম হয় এবং মানুষ বিনোদন পায়। এ ছাড়া বাজে আড্ডা ও নেশা থেকে আমরা দূরে থাকতে পারি।
মোহাম্মদপুর স্টান্ট বাইকার্স টিমের দলনেতা ও ম্যানগ্রোভ ইনস্টিটিউটের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মাহমুদ আগে সাইকেল স্টান্ট করতেন। এক বছর ধরে তিনি মোটরসাইকেল স্টান্ট করছেন। তিনি বলেন, অবসর সময়ে অনেক তরুণ মোড়ে মোড়ে আড্ডা দেয় এবং অনেকে মাদক সেবন করে। তার চেয়ে বরং খেলাধুলার মধ্যে থাকলে তরুণরা বিপথগামী হয় না। পোল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে স্টান্ট এরই মধ্যে স্পোর্টস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে কেউ স্টান্ট করলে লোকজন খারাপ চোখে দেখে। তাকে উচ্ছৃঙ্খল আখ্যায়িত করে। অথচ খুলনায় যারা স্টান্ট করেন, তারা কেউই উচ্ছৃঙ্খল বা বখাটে নয়; সবাই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে অনেকেই আছে, যারা মেধাবী শিক্ষার্থী এবং পরীক্ষায় ভালো ফল করে।
খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র মো. আকাশ জানান, স্টান্ট করতে গেলে হাত-পা ভেঙে যাবে বলে বাড়ির সবাই নিষেধ করে। স্টান্টে কিছুটা ঝুঁকি আছে, তবে নিরাপত্তার জন্য তাঁরা বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করেন। এর মধ্যে রয়েছে হেলমেট, হ্যান্ড গ্লাভস, জুতা, নিগার্ডসহ আরও অনেক সরঞ্জাম। নিয়মকানুন মেনে করলে তেমন কোনো অসুবিধা হয় না।
খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম রশিদী দোজা বলেন, আমাদের দেশে স্টান্ট স্পোর্টস হিসেবে স্বীকৃত নয়। স্টান্ট করার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা, প্রশিক্ষকসহ আরও বেশ কিছু জিনিস প্রয়োজন হয়। যারা স্টান্ট করে, তারা নিজের আগ্রহে ভিডিও দেখে দেখে শেখে। তাদের সহযোগিতা করা গেলে তারা ঝুঁকিমুক্তভাবে আরও ভালো করতে পারত।
Leave a Reply