আসছে বাজেটে বিদেশ যাত্রীদের ভ্রমণ কর বাড়তে পারে ২০ থেকে ৫০%। তবে অর্থনীতিবিদরা বর্তমান মূল্যস্ফীতির মধ্যে চাপে থাকা মানুষের ওপর নতুন করে করের ভার না বাড়িয়ে বরং করযোগ্য ব্যক্তিদের করের আওতায় আনতে ট্যাক্স নেট বাড়ানো যৌক্তিক বলে মনে করছেন।
কর আদায় বাড়াতে নানামুখী প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এবার বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ (এনবিআর)। আসছে বাজেটে বিদ্যমান ভ্রমণ কর ২০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে বাজেট সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, আগামী ১৪ মে এনবিআরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হবে অর্থমন্ত্রী সহ এনবিআরের বাজেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। ওইদিন মূলত বাজেটে অর্থবিলের পরিবর্তনগুলো প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী চূড়ান্ত হবে। এরপর বড় ধরণের কোন পরিবর্তন না থাকলে আগামী ১ জুন বাজেটে তা উপস্থাপন করা হতে পারে।
অর্থনীতিবিদরা বর্তমান মূল্যস্ফীতির মধ্যে চাপে থাকা মানুষের উপর নতুন করে করের ভার না বাড়িয়ে বরং করযোগ্য ব্যক্তিদের করের আওতায় আনতে ট্যাক্স নেট বাড়ানো যৌক্তিক বলে মনে করছেন।
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “এভাবে হঠাৎ হঠাৎ ট্যাক্স না বাড়িয়ে ট্যাক্সের নেট বাড়ানো উচিত। বর্তমানে এমনিতেই মানুষ মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে। নতুন করে করের ভার বাড়ানো যৌক্তিক হবে না।”
এছাড়া বিদেশগামী শ্রমিকদের উপর কোন ধরনের ট্যাক্স থাকাই উচিত নয় বলে মনে করেন তিনি। ভ্রমণ কর আইন, ২০০৩ এর অধীনে দেশে বিদেশগামী মানুষের কাছ থেকে কর আদায় করা হয়, যেখান থেকে বাদ যায় না শ্রমিকরাও।
সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছে ১১ লাখ ৩৫ হাজার কর্মী, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এসব শ্রমিককেও ভ্রমণ কর দিতে হচ্ছে।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ শ্রমিক যায় মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশে। এসব দেশে ভ্রমণ কর বর্তমানে ৩০০০ টাকা।
এনবিআরের সাবেক সদস্য (কর নীতি) ড. সৈয়দ মো. আমিনুল করিম মনে করেন, শ্রমিক এবং চিকিৎসার জন্য যায়, এমন ব্যক্তিদের উপর ট্যাক্স বাড়ানো উচিত হবে না।
অবশ্য টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ট্রাভেল ট্যাক্স বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, “গত কয়েক বছরে ভ্রমণ কর বাড়েনি। এই সময়ে টাইম ভ্যালু অব মানি হিসাব করলে বাড়ানো যৌক্তিক।”
বিশেষত ইউরোপ, আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোতে যারা ভ্রমণ করেন, তাদের উপর ভ্রমণ কর বাড়ানোর যেতে পারে বলে মত দেন তিনি। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০১৪ সালে ভ্রমণ কর বাড়ানো হয়েছিলো।
বর্তমান যারা সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ করেন তাদের প্রত্যেককে পরিবহনের ধরনের উপর ভিত্তি করে ৫০০-১২০০ টাকা দিতে হয়। উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, চীন, জাপান, হংকং, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া এবং তাইওয়ানে ভ্রমণকারীদের জন্য কর ৪ হাজার টাকা। এছাড়াও অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে ভ্রমণ কর ৩ হাজার টাকা।
Leave a Reply