ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে দুইদিন বন্ধ থাকার পর আজ পুরোদমে চালু হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালন কার্যক্রম। এরই সঙ্গে সাগরে পাঠিয়ে দেয়া পণ্যবাহী জাহাজ আজ জোয়ারের সময় ফেরত আসতে শুরু করবে বন্দর জেটিতে। জেটিতে কোনো জাহাজ না থাকায় গতকাল পর্যন্ত জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো-নামানো শুরু করা যায়নি। পণ্য ওঠানো-নামানোর কার্যক্রমসহ খালাস কার্যক্রমও বন্দর চত্বর থেকে শুরু হবে।
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তর ১২ মে রাত ৯টায় ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারি করে। এর পরই বন্দরের নিজস্ব সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়। পরে বন্ধ করে দেয়া হয় বন্দরের পরিচালন কার্যক্রম। জেটি থেকে সব জাহাজ সাগরে সরিয়ে নিয়ে পণ্য ওঠানো-নামানো বন্ধের পাশাপাশি খালাসের কার্যক্রমও বন্ধ করে রাখা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থেকে জেটি, যন্ত্রপাতি ও পণ্যের সুরক্ষার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছিলাম আমরা। তবে সুখবর হলো, বন্দরে কোনো ধরনের ক্ষতি অনুভূত হয়নি। আজ থেকেই পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হবে। জেটিতে জাহাজ ভেড়ানোর পর পণ্য ওঠানো-নামানোর কার্যক্রমও শুরু হবে।’
বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বন্দরের অবকাঠামোগত ক্ষতি না হলেও ব্যবসায়ীরা ঠিকই ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছেন। বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকা মানেই আমদানি হওয়া খাদ্যপণ্যসহ জরুরি পণ্য আটকে পড়া। কাঁচামালের সরবরাহ পেতে দেরি হলে উৎপাদন ব্যবস্থা পিছিয়ে যায়। ’
বন্দরের তথ্য মতে, জাহাজের আকারভেদে বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙরে দুই জায়গাতেই পণ্য খালাস হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর বিপৎসংকেত জারির সঙ্গে সঙ্গেই বন্দরে নিজস্ব সতর্কতা জারি করা হয়। সে অনুযায়ী, বন্দর জেটি থেকে পর্যায়ক্রমে ২০টি জাহাজ সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। জাহাজ সাগরে পাঠিয়ে দেয়ার পর মূল জেটি ফাঁকা হয়ে গেছে। নিজস্ব অ্যালার্ট জারির পর বন্দর চত্বর থেকেও পণ্য খালাস বন্ধ করে দেয়া হয়। নিরাপত্তার কারণে জেটি থেকে ফেরত যাওয়া জাহাজসহ বন্দরে এখন আমদানি পণ্য নিয়ে সমুদ্রগামী জাহাজ রয়েছে প্রায় ৭০টি। এর মধ্যে রয়েছে ডাল, গম, লবণ, অপরিশোধিত চিনি, ভারী শিল্পের কাঁচামাল প্রভৃতি। ছোট আকারের সমুদ্রগামী জাহাজগুলো আজ জেটিতে ভেড়ানোর পর পণ্য খালাস শুরু হবে। এছাড়া বৈরী আবহাওয়া কেটে গেলে বড় জাহাজগুলো (মাদার ভেসেল) থেকে সাগরেই লাইটার জাহাজের মাধ্যমে পণ্য খালাস কার্যক্রম শুরু হবে। বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যের অর্ধেকেরও বেশি খালাস হয় বহির্নোঙরে। সাগর উত্তাল থাকার কারণে গতকাল পর্যন্ত সেই পণ্য খালাসে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এদিকে পণ্য খালাস না হওয়ায় কর্ণফুলী নদীর মোহনায় নোঙর করে রাখা হয়েছে অসংখ্য লাইটার জাহাজ। আজ থেকে এসব জাহাজেও পণ্য বোঝাইয়ের কাজ শুরু হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বন্দরে কোনো ক্ষতি হয়নি। আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বন্দরে বিপৎসংকেত নামিয়ে আনলেই চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব সতর্কতা সংকেত ‘অ্যালার্ট-৪’ প্রত্যাহার করে নেবে। আজ জেটিতে জাহাজ ফেরত আনা শুরু হবে। এর সঙ্গেই বন্দরে সব কার্যক্রমও শুরু হয়ে যাবে ।’
১৯৯২ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রণীত ঘূর্ণিঝড়-দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী পুনর্বাসন পরিকল্পনা অনুযায়ী, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংকেত অনুযায়ী চার ধরনের সতর্কতা জারি করে বন্দর। আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩ নম্বর সংকেত জারি করলে বন্দর প্রথম পর্যায়ের সতর্কতা বা ‘অ্যালার্ট-১’ জারি করে। চার নম্বর সংকেতের জন্য বন্দর অ্যালার্ট-২ জারি এবং বিপৎসংকেত ৫, ৬ ও ৭ নম্বরের জন্য ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি করা হয়। মহাবিপৎসংকেত ৮, ৯ ও ১০ হলে বন্দরেও সর্বোচ্চ সতর্কতা বা ‘অ্যালার্ট-৪’ জারি করা হয়।
বন্দর ব্যবহারকারী ফোরামের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব হতে সুরক্ষার পদক্ষেপ হিসেবে বন্দর কর্তৃপক্ষকে পরিচালন কার্যক্রম বন্ধ করে রাখতে হয়েছে। যদিও আমদানি হওয়া খাদ্যপণ্যসহ জরুরি পণ্য আটকে পড়ায় ব্যবসায়ীরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে বৈরী আবহাওয়া কেটে গেলে পরিচালন কার্যক্রম যত দ্রুত সম্ভব পুরোদমে চালু করে দিতে হবে ।’
ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে চট্টগ্রাম নগরীতে বড় ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গেলেও কক্সবাজারে ২ হাজার ৫২২টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সেন্ট মার্টিন দ্বীপেই প্রায় ৭০০ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। কক্সবাজারে মোট ৫৭টি ইউনিয়ন ও তিনটি পৌরসভা ঘূর্ণিঝড় মোখায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে ১০ হাজার ৪৬৯টি বাড়িঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
Leave a Reply