মোটরসাইকেল চালাতে চালাতে হঠাৎ হাত ছেড়ে দিয়ে বাইকের উপর দাঁড়িয়ে যাওয়া কিংবা আচমকা ব্রেক কষে বাইকের পিছন দিক শূন্যে ভাসানো অথবা যেকোনো এক দিক হেলে গিয়ে প্রায় রাস্তার সাথে লাগানোর চেষ্টা। এক শ্রেণির চালক আছেন যাদের কাছে এই কাজগুলো কেবল শখই নয়, ভালোবাসারও। আর তাদেরকেই বলা হয় মোটরসাইকেল স্টান্ট রাইডার। বাংলাদেশে মোটরসাইকেল স্টান্ট রাইড খুব ব্যাপক পরিসরে প্রচলিত না হলেও একেবারে অপরিচিত নয়। চট্টগ্রামের ফাঁকা রাস্তায় মাঝে মাঝে বাইক স্টান্ট রাইডারদের দেখা মেলে। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এই প্রবণতার ছোঁয়া লেগেছে। মোটরবাইক নিয়ে প্রতিটি স্টান্টের আলাদা আলাদা নামও রয়েছে। যেমন- হুইলি, স্টপই, বার্ন আউট, সার্কেল, হিউম্যান কম্পাস ইত্যাদি। বাইক স্টান্টিং মূলত একটি খেলা। অন্যান্য খেলার মতো এই খেলারও কিছু নিয়ম রয়েছে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সতর্কতা অবলম্বন করে খেলতে পারলে এই খেলা বেশ উপভোগ্য। নিরাপত্তার স্বার্থে ক্রিকেট বা অন্যান্য খেলার মতোই স্টান্টিং-এর ক্ষেত্রেও সার্টিফাইড হেলমেট, গøাভস, নি গার্ড, এলবো গার্ড, রাইডিং জ্যাকেট, বুট ও প্যান্ট ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশের উদীয়মান স্টান্ট রাইডারদের নিয়ে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। এর লক্ষ্য তাদের দক্ষতা প্রদর্শন এবং স্টান্ট প্রফেশনালদের মাধ্যমে এ বিষয়ে নানা কৌশল ও নিয়ম সম্পর্কে জানানো। এনটিভিতে পালসার স্টান্ট ম্যানিয়া নামক স্টান্ট রিয়েলিটি শো-এর প্রচারণা শুরু হয়। এই রিয়েলিটি শো স্টান্টপ্রেমী ও মোটরসাইকেল কমিউনিটির কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কথা হয় চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার ছেলে জনপ্রিয় স্টান্ট রাইডার মোহাম্মদ আব্দুর রহিমের সাথে।
আলাপ শুরু হয়েছিল রহিমের স্টান্ট শেখার গল্প দিয়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোটরসাইকেল স্টান্টের আনুষ্ঠানিক চল থাকলেও বাংলাদেশে অনেকটাই অপ্রচলিত। যাঁরা অংশ নেন, রোমাঞ্চের টানেই স্টান্ট করেন। রহিমও জড়িয়েছেন রোমাঞ্চের টানে। তিনি বলেন, আমার শুরু বাই সাইকেল দিয়ে। প্রথমে স্কুল জীবনে বাই সাইকেল দিয়ে স্টান্ট শুরু করি। সেই থেকে আমার পথচলা শুরু। এসএসসি পরীক্ষার পর আমি একটি মোটরবাইক কিনি। তারপর বাইক দিয়ে স্টান্ট করা শুরু করি। স্টান্ট করা যখন শুরু করি তখন লোকজন অনেক নানান রকম কথা বলত। মাঝে মাঝে এসব শুনে খারাপও লাগত। কিন্তু এসব গায়ে না মেখে স্টান্ট করা শিখতে খাকি। আস্তে আস্তে বাইক স্টান্টে দক্ষ হয়ে উঠি। তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামে অনেক বাইক শো তে আমাকে ডাকা হয় স্টান্ট করার জন্য ও বাইকের রিভিও দেওয়ার জন্য। বাইক স্টান্ট করার পর সবাই খুব প্রশংসা করে। অনেক পুরস্কারও পেয়েছি। সেই প্রশংসা থেকে আরো উৎসাহ বেড়ে যায়। তিনি আরো বলেন, ২০১৯ সালে এনটিভিতে পালসার স্টান্ট ম্যানিয়া নামক স্টান্ট রিয়েলিটি শো তে আমি অংশগ্রহণ করি। ওই শো তে সেরা দশে ছিলাম।
কত রকম স্টান্ট দেখাতে পারেন? রহিম বলেন, ৩৬০ ডিগ্রি (মাটিতে পা রেখে বাইক ঘোরানো), ক্রাইস্ট (সিট বা তেলের ট্যাংকের ওপর দাঁড়িয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বাইক চালানো), নানা ধরনের হুইলি (সামনের চাকা তুলে চালানো, পেছনের চাকা তুলে চালানো…)’। এসব কৌশল আমি রপ্ত করেছিন নিজ আগ্রহ ও শখের বশে। কখনো ইউটিউবে, কখনো বিদেশি স্টান্ট ম্যানিয়ার অনুষ্ঠান দেখে। পরিবার নিয়ে রহিম বলেন, পরিবারের সদস্যরা প্রথমে সমর্থন দিত না। এখন মোটামোটি স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি মা আমাকে সমর্থন করেন।
তিনি আরো বলেন, Raahim BM RZ নামে ফেসবুক ফেইজে ৩ লক্ষেরও বেশি ফলোআর আছে এবং ইউটিউবেও ১০ হাজার ফলোআর আছে। ফেসবুক ফেইজ এবং ইউটিউব থেকে আমার খুব ভাল আয় হয়। যখন স্টান্টের ভিডিও আপলোড করি সবাই খুব প্রশংসা করে। কলকাতাতেও অনেকে আমার স্টান্ট করা ভিডিও দেখেন। তারাও খুব প্রশংসনীয় কমেন্ট করেন। একটু হেসে তিনি বললেন তখন আমার খুব ভাল লাগে। রহিম আরো বলেন, হুটহাট বাইক স্টান্টের চমক দেখাতে চাওয়া বোকামো। ঘটতে পারে বিপজ্জনক কিছু। তাই জানতে হবে কৌশল, করতে হবে নিয়মিত অনুশীলন। সেগুলোও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জামে প্রস্তুত হয়ে।
Leave a Reply