কর্মীদের হয়রানি, অব্যবস্থাপনা ও অসদাচরণের শিকার হতে হয় উল্লেখ করে গতকাল রোববার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। রাজধানীর কুর্মিটোলায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কনকোর্স হলে সিভিল এভিয়েশন অথোরিটি অব বাংলাদেশ (সিএএবি) আয়োজিত গণশুনানিতে দেশের সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ততম আর্ন্তজাতিক এয়ারপোর্ট নিয়ে তারা অভিযোগ করেন।
অভিযোগগুলোর মধ্যে আছে মশার উপদ্রব থাকা, কর্মীদের অসহযোগী আচরণ, হয়রানী, অব্যবস্থাপনা, যাত্রীদের বসার জায়গায় অপ্রতুলতা, লাগেজ মিসহ্যান্ডলিং ইত্যাদি।
এছাড়া এয়ারপোর্টে সৌন্দর্যহীনতা, যাত্রী সুবিধার অভাবের মত অভিযোগও করা হয়েছে গনশুনানিতে। সিঙ্গাপুর প্রবাসী আনোয়ার বলেন, “আমি আট বছর যাবত এই এয়ারপোর্ট ব্যবহার করি। এত বছরে এটার তেমন কোন উন্নতি দেখিনি। সৌন্দর্য বর্ধনের কোন কাজ হচ্ছে না। যাত্রীদের অপেক্ষার জন্য বসার জায়গায় অপ্রতুল। বিশুদ্ধ খাবার পানির ফিল্টার কাজ করে না। যাত্রীদের মোবাইল চার্জ দেওয়ার তেমন কোন ব্যবস্থা নেই।” ভারতের রাজস্থান থেকে ঘুরতে আসা শান্তনু অভিযোগ করেন, এখানে স্টাফদের খুব একটা সহযোগিতা পাওয়া যায় না।
তিনি আরো বলেন, “এই দেশের মোবাইল সিম আমি এখনও নিতে পারিনি। এয়ারপোর্টে থেকে বাড়িতে ফোন করে পৌঁছানোর খবরটি জানাব, সেটা করা গেল না। এয়ারপোর্টে কোন ফোন করার ব্যবস্থা নাই। এখানে ওয়াশরুম খুব একটা পরিষ্কার নয়। সেখানে হাত ধোয়ার জন্য কোন সাবানও পাওয়া যায় না।”
অভিযোগের জবাবে সিএএবি’র চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান বলেন, উক্ত বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে দেখা হবে। সেইসাথে এই অব্যবস্থা এবং যাদের গাফিলতির জন্য এসব হচ্ছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে নিশ্চিত করেন। তিনি আরও বলেন, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলেও অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
গণশুনানিতে জাজিরা এয়ারওয়েজের ঢাকা স্টেশন ম্যানেজার রেহনুমা শেখ শাহজালাল বিমানবন্দরে একটি মেডিসিন কর্ণার করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, এই উদ্যোগ নেওয়া হলে যাত্রী ও এখানকার স্টাফদের জন্য এটা অনেক উপকার হবে।
এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য বিভাগ আছে। তবে ওষুদের বিষয়ে পৃথক কোনো উদ্যোগ নেওয়া যায় কিনা তা ভাবা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের হজরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সালাম এয়ারের প্রায় ১ হাজার যাত্রী তাদের লাগেজ পাচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, “সময়মতো যাত্রীদের লাগেজ পাওয়া নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে মাঝে মাঝে কিছুটা ব্যত্যয় ঘটে।”
“যেসব উড়োজাহাজ সংস্থার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আসছে, তাদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ছোট আকারের উড়োজাহাজের (ন্যারো বডি) ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা বেশি হয়। তবে কোনো এয়ারলাইনসকেই ছাড় দেওয়া হবে না,” বলেন তিনি।
নিরাপত্তাকর্মীরা যে সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে, তাদের হয়রানি করেন- এ বিষয়ে তিনি বলেন, “বিমানবন্দরের যারা কাজ করেন তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যারা যাত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন, তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না, সে যে পর্যায়ের কর্মকর্তাই হোক না কেন। সবার ওপরে নজর আছে।”
বিমানবন্দরে আসছে হটলাইন
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রীসেবায় চালু হতে যাচ্ছে হটলাইন। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে এই হটলাইন সেবায় ২৪ ঘণ্টা যাত্রীরা মতামত বা অভিযোগ জানানোর সুযোগ পাবেন।
সিএএবি চেয়ারম্যান বলেন, “হট লাইনের মাধ্যমে যেকোন যাত্রী বা ব্যক্তি যেকোন জায়গা থেকে বিমানবন্দরের সেবা নিয়ে অভিযোগ বা মতামত জানাতে পারবেন। যে ধরনের অভিযোগই আসুক না কেন, তা সমাধান করা হবে।”
মফিদুর রহমান আরো জানান, “জুলাই নাগাদ এই হটলাইন সেবা চালু হবে। দিনে ও রাতে ২৪ ঘণ্টা এই হটলাইনে যাত্রীরা যেকোন অভিযোগ ও বিমান বন্দরের সেবা নিয়ে মতামত জানাতে পারবে। এই সেবার জন্য জনবল নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সেবা দিতে কোনো কমতি রাখা হবে না।”
এসময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, “গণশুনানির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চালু থাকবে। বিমানবন্দরে ২৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। যাত্রীরা সাধারণত কোন সমস্যায় পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন।”
“হটলাইন চালু হলে যাত্রীদের ফোন নম্বরে ওই অভিযোগের ভিত্তিতে একটি টিকিট তৈরি হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে ওই অভিযোগের টিকিট দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে নিষ্পন্ন করা হবে। সবার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই আমাদের উদ্দেশ্য,” বলেন তিনি।
Leave a Reply