1. paribahanjagot@gmail.com : pjeditor :
  2. jadusoftbd@gmail.com : webadmin :
বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
পেট্রোনাস লুব্রিক্যান্টস বিক্রি করবে মেঘনা পেট্রোলিয়াম অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশে ভারতীয় সব ভিসা সেন্টার বন্ধ মন্ত্রী এমপিদের দেশত্যাগের হিড়িক : নিরাপদ আশ্রয়ে পালাচ্ছেন অনেকেই বাস ড্রাইভার নিকোলাস মাদুরো আবারও ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট ইউএস-বাংলার দশম বর্ষপূর্তি : ২৪ এয়ারক্রাফট দিয়ে দেশে বিদেশে ২০ গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রী পরিবহন তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বিশ্বখ্যাত মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড রয়েল এনফিল্ড খুব শিগগিরই বাজারে আসছে সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী এমটি কনসার্টো জাহাজে বাংলাদেশী নাবিকের মৃত্যুর তদন্ত দাবি লুব্রিকেন্ট আমদানিতে বাড়তি শুল্কায়নে ডলার পাচার বাড়বে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সম্পাদক ওসমান আলীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, অপসারণ দাবি

বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর ঢাকা : গবেষণা প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর ঢাকা। ১৫২টি দেশের ১ হাজার ২০০-এরও বেশি শহরের মোটরযানের গড় গতি নিয়ে করা এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য।গবেষণাটি পরিচালনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ (এনবিইআর)। ধীরগতির শহরের তালিকায় শীর্ষ ২০-এ ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামও রয়েছে। বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির শহরের তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের শহর ফ্লিন্ট।
২০১৭ সালে ঢাকার যানজট পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণে বলা হয়েছিল, ঢাকায় যানবাহনের গতিবেগ ঘণ্টায় সাত কিলোমিটারে নেমে এসেছে। কয়েক বছরের মধ্যে তা মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও নিচে নেমে আসবে। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় যানবাহনের গড় গতি মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কমে এসেছে। এ প্রবণতা এখনো প্রকটভাবে চলমান বলে জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলছেন, ‘ঢাকার যানজট মূল সড়ক ছাপিয়ে শাখা সড়কগুলোয়ও ছড়িয়ে পড়েছে।’ বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘ম্যাসাচুসেটসের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের গবেষণাটি করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। একটি শহরের সব সড়কের চিত্র বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বলা হয়, ঢাকায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার প্রাইমারি সড়ক রয়েছে। কিন্তু প্রাইমারি সড়কের যেসব বৈশিষ্ট্য তার বেশির ভাগই এসব সড়কে অনুপস্থিত। অবকাঠামোগত ও ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতার কারণে সড়কগুলো ভীষণ রকমের বিশৃঙ্খল। যানবাহন চলছে সক্ষমতার চেয়ে বেশি। ফলে যানজট মূল সড়ক ছাড়িয়ে শাখা সড়কগুলোয়ও চলে যাচ্ছে। এ প্রবণতা ঢাকার জন্য বেশ অ্যালার্মিং।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানজট যখন থাকে না, তখনো ঢাকায় যানবাহনের গড় গতি বিশ্বের অন্য শহরগুলোর চেয়ে কম। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এ শহরের সড়কগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগও কমে এসেছে। তবে যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো সম্ভব বলে মনে করেন অধ্যাপক হাদিউজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ঢাকার সড়কগুলোর যে সক্ষমতা তা বিবেচনায় নিয়ে চলাচলের জন্য যানবাহনের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করে দেয়া জরুরি। ব্যক্তিগত গাড়ি কমিয়ে আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে কিছুটা হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’
এনবিইআরের গবেষণা বলছে, ধীরগতির শীর্ষ ২০ শহরের তিনটিই বাংলাদেশের। আর সবচেয়ে দ্রুত গতির ২০ শহরের মধ্যে ১৯টি যুক্তরাষ্ট্রের, একটি কানাডার। ওই গবেষণার বরাত দিয়ে মার্কিন সাময়িকী টাইম জানিয়েছে, ১৫২টি দেশের ১ হাজার ২০০-এরও বেশি শহরে মোটরযানের গড় গতির ওপর এ গবেষণা চালানো হয়েছে। চীনের বাইরে বিশ্বের মোট শহুরে জনসংখ্যার ৯৬ শতাংশের বসবাস এসব শহরে। এতে দেখা গেছে, দরিদ্র দেশগুলোর তুলনায় ধনী দেশের শহরগুলোয় মোটরযানের গড় গতি অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি।
ম্যাসাচুসেটসের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের সূচকে মাইনাস শূন্য দশমিক ৬০ পয়েন্ট নিয়ে ধীরগতির শহরের তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে ঢাকা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে নাইজেরিয়ার দুই শহর লাগোস ও ইকোরদু। চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা এবং ভারতের মহারাষ্ট্রের বিওয়ান্দি শহর। ৬ নম্বরে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা। ধীরগতির শীর্ষ ১০ শহরের মধ্যে ময়মনসিংহের অবস্থান ৯ নম্বরে। ১২ নম্বরে রয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম।
ধীরগতির শীর্ষ ২০ শহরের আটটি ভারতের। বিওয়ান্দি ও কলকাতা ছাড়া বাকি শহরগুলো হচ্ছে বিহারের আররাহ ও বিহার শরিফ, মহারাষ্ট্রের মুম্বাই, মিজোরামের আইজল, দক্ষিণ কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু ও মেঘালয়ের শিলং।
এর বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের ফ্লিন্ট শহর। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে নর্থ ক্যারোলিনার গ্রিনসবোরো ও কানসাসের উইচিতা। চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে ওকলাহােমার তুলসা ও মিশিগানের ল্যান্সিং।
গবেষণা বলছে, একটি শহরে গাড়ির গতি কেমন হবে সেটি শতভাগ যানবাহনের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে না। এখানে সড়কের বিন্যাস এবং গুণমানের মতো বিষয়গুলোও রয়েছে।
এ গবেষণার লিড অথর ছিলেন ফিনল্যান্ডের আল্টো ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ প্রত্যয় আকবর। তার মতে, ‘সবচেয়ে ধীরগতির শহরগুলোয় যে সবচেয়ে বেশি যানজট, এমন নয়। আবার সবচেয়ে বেশি যানজটের সড়কও সবচেয়ে ধীরগতির নয়।’
প্রত্যয় আকবর ও তার সহযোগী গবেষকরা তিন লাখের বেশি জনসংখ্যা রয়েছে—এমন সহস্রাধিক শহরের ট্রাফিক বিশ্লেষণে গুগল ম্যাপসের ডাটা ব্যবহার করেছেন। তবে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়াকে গবেষণা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। কেননা, অ্যাপটি এসব দেশ থেকে ডাটা সংগ্রহ করতে পারে না। আর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ থাকায় উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের মতো আরো কয়েকটি শহরকে গবেষণার বাইরে রাখা হয়েছে।
গবেষণায় লোকজনের শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে আবাসিক এলাকায় যাতায়াত কিংবা বাসা থেকে রেস্টুরেন্ট পর্যন্ত ট্রিপের দিকে নজর রাখা হয়েছে। এসব ডাটা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, কোনো একটি শহরে ভ্রমণ করতে কত সময় লাগবে সে ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণীর জন্য শহরটির আকার বা সেটি কত পুরনো সেটি বিবেচ্য নয়, বরং বড় বিষয় হলো এটি যে দেশে অবস্থিত তার অর্থনৈতিক অবস্থা।
দ্রুতগতির শীর্ষ ২০ শহরের ১৯টিই যুক্তরাষ্ট্রের, অন্যটি দেশটির প্রতিবেশী কানাডার। মার্কিন যে শহরগুলো তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে তার প্রায় সবই মাঝারি আকারের। যেমন ফ্লিন্ট, মেমফিস, উইচিতা কিংবা কানস। এসব শহরে মহাসড়কগুলো বেশ প্রশস্ত। বিশ্বজুড়ে দ্রুতগতির ১০০ শহরের মধ্যে ৮৬টি যুক্তরাষ্ট্রের। এর মধ্যে আবার শীর্ষ ২০-এর ১৯টিও তাদের দখলে। ব্যতিক্রম শুধু কানাডার উইন্ডসর। ধনী দেশগুলোর অপেক্ষাকৃত দরিদ্র শহরগুলোয়ও গাড়ির গতি তুলনামূলক বেশি থাকে।
ঢাকা, লাগোস ও ম্যানিলার মতো ধীরগতির শহরগুলোর প্রায় সবই উন্নয়নশীল বিশ্বের, যেসব দেশের অবকাঠামো তাদের জনসংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সবচেয়ে দ্রুতগতির সবক’টি শহরই ধনী দেশগুলোয়। আর ধীরগতির শহরের সবই অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশে।
অধিক যানজটের শহরগুলোর মধ্যে ধনী, দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের শহরও রয়েছে। এ তালিকায় উন্নয়নশীল বিশ্বের বোগাটা ও মেক্সিকো সিটির পাশাপাশি নিউইয়র্ক সিটি এবং লন্ডনের নামও রয়েছে। একটা বিষয়ে এদের সবার মধ্যে মিল রয়েছে। তা হলো আকার। সবকটিই বেশ বড় শহর, রাস্তায় প্রচুর গাড়ি।
এ গবেষণার লিড অথর, আল্টো ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ প্রত্যয় আকবর বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। তার মতে, বিভিন্ন শহরে ভ্রমণের সময়সীমা কমিয়ে আনতে বিভিন্ন রকমের প্রেসক্রিপশন প্রয়োজন। ঢাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে রাস্তায় প্রাইভেট কারের সংখ্যা কমানোর জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল। রেস্তোরাঁ খোলা থাকার মতো বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ এবং মহাসড়ক থেকে সাইকেল বা রিকশার মতো ধীরগতির যানবাহন নিষিদ্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এর মানে হলো, আপনি বড়জোর দুপুরের গতিকে মাঝরাতের গতির মতো দেখাতে পারেন। এ ধরনের পদক্ষেপ কেবল এ পর্যন্তই সাহায্য করতে পারে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর নগর পরিকল্পনাবিদদের যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মতো দেশের শহরগুলোর ট্রাফিক সমীক্ষার ওপর নির্ভরতার কথাও উল্লেখ করেন প্রত্যয় আকবর। তবে তার মতে, উভয় ক্ষেত্রে প্রয়োজন ও সমাধান ভিন্ন রকমের হতে পারে।
আল্টো ইউনিভার্সিটির এ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, দ্রুত ভ্রমণই শুধু একটি শহরকে আকর্ষণীয় করে তোলে না। এক্ষেত্রে তিনি বিশ্বের দ্রুততম শহর ফ্লিন্টের উদাহরণ টানেন। ১৯৫০ সাল থেকে এ পর্যন্ত শহরটির জনসংখ্যার অর্ধেক কমেছে। ফলে”বিশ্বের দ্রুততম শহরটি আসলে সে অর্থে ঈর্ষণীয়ও নয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
© 2020, All rights reserved By www.paribahanjagot.com
Developed By: JADU SOFT