দেশের সড়ক-মহাসড়কে গাড়ি চলাচলের গতিসীমা বেঁধে দিয়েছে সরকার। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জারি করা ‘মোটরযানের গতিসীমা-সংক্রান্ত নির্দেশিকা-২০২৪’ অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন, পৌর এলাকা এবং জেলা সদরে মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতি হবে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়ে এবং ‘এ’ ক্যাটেগরির জাতীয় মহাসড়কে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, জিপ, বাস, মিনিবাস ও ভারী যানবাহন চালানো যাবে। এসব সড়কে ট্রাক, মিনি ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল চালানো যাবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে। তবে ‘এ’ ক্যাটেগরির জাতীয় মহাসড়কে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার গতিতে চলতে হবে। বর্তমানে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার গতিও ৪০ কিলোমিটারের বেশি। বাইকের গতি ৩০ কিলোমিটার নির্ধারণ করায় বিতর্ক শুরু হয়েছে।
নির্দেশিকা অনুযায়ী, এক্সপ্রেস এবং জাতীয় মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলতে পারবে না। ‘এ’ ক্যাটেগরির জাতীয় মহাসড়ক বলতে সার্ভিস লেন ব্যতীত চার বা ছয় লেনের সড়ককে বোঝানো হয়েছে; যা ৯ দশমিক ৮ থেকে ১৩ দশমিক ৪৫ মিটার প্রশস্ত হবে। যে মহাসড়ক এবং আঞ্চলিক মহাসড়ক দুই লেনের এবং বিভাজকবিহীন, সেগুলোকে ‘বি’ ক্যাটেগরি গণ্য করা হয়েছে। এই ধরনের সড়কে সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার গতিতে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, জিপ, বাস, মিনিবাস ও ভারী যানবাহন চালানো যাবে। ট্রাক, মিনি ট্রাক এবং পণ্যবাহী যানবাহন ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতি হবে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার।
জেলা সড়কে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, জিপ, বাস, মিনিবাস ও ভারী যানবাহন চালানো যাবে। ট্রাক, মিনি ট্রাক এবং পণ্যবাহী যানবাহন ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতি হবে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। অনুমতি সাপেক্ষে তিন চাকার যানবাহন চলতে পারবে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার গতিতে।
সিটি করপোরেশন, পৌর এলাকা এবং জেলা সদরের আওতাধীন এলাকায় জাতীয় মহাসড়কে ৪০ কিলোমিটার গতিতে মোটরকার, মাইক্রোবাস, জিপ, বাস, মিনিবাস ও ভারী যানবাহন চালানো যাবে। মোটরসাইকেলও ৩০ কিলোমিটার গতিতে চালাতে হবে। সিটি করপোরেশন, পৌর এলাকা, জেলা সদরের অভ্যন্তরীণ সড়ক এবং উপজেলা এলাকায় মহাসড়কে একই গতিসীমা মেনে চলতে হবে। শহর এলাকার দুই লেনের সড়কে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, জিপ ও ট্রাক ৩০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। এসব এলাকায় মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতি হবে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার। গ্রামীণ এলাকায় প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, জিপ, ট্রাক ও মোটরসাইকেল ৩০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা অর্ধেকে কমিয়ে আনতেই গতিসীমা নির্ধারণ করছে সরকার, যা মেনে চলতে হবে। জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিত মোটরযান, যেমন অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ইত্যাদির ক্ষেত্রে গতিসীমা শিথিলযোগ্য। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, প্রখর রোদ, অতিরিক্ত বৃষ্টি, ঘন কুয়াশা ইত্যাদি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণযোগ্য নিরাপদ গতিসীমা প্রযোজ্য হবে। দৃষ্টিসীমা কমে গেলে মোটরযান চালানো বন্ধ রাখতে হবে।
গতিসীমা নির্ধারণে গত ২৫ এপ্রিল সড়ক পরিবহন সচিব এ বি এম আমিনউল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে সভা হয়। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, আইন সরকারকে গতিসীমা নির্ধারণ করার ক্ষমতা দিয়েছে। গতিসীমা না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৪৪ ধারা অনুযায়ী, রাস্তার নির্মাণকারী এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার পরামর্শে গতিসীমা নির্ধারণ বা পুনর্নির্ধারণ করতে পারবে কর্তৃপক্ষ। নির্ধারিত গতিসীমার বেশি গতিতে গাড়ি চালানো যাবে না। বিপজ্জনক ওভারটেকিং বা সড়কে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। ৮৭ ধারা অনুযায়ী, গতিসীমা লঙ্ঘন করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা তিন মাস কারাদণ্ড হতে পারে।
Leave a Reply