করোনা সংক্রমনের মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি নতুন রেকর্ড গড়েছে। ২০২০ সালের জুলাই মাসে এই বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৭২ হাজার একক কনটেইনার; যা বিগত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্য দিয়েই করোনার আর্থিক ধকল কাটিয়ে উঠছে বাংলাদেশ। শুধু পণ্য রপ্তানিই নয়; আমদানিতেও করোনার ধস কাটিয়ে উঠছে; যদিও আমদানি পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা মহামারির মধ্যেই কারখানা-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করে দেওয়ার মতো প্রধানমন্ত্রীর সাহসী সিদ্ধান্তের ফলেই রপ্তানিতে বড় ধরনের সুফল মিলেছে।
গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি আবদুস সালাম বলেন,‘কারখানা খোলার ব্যাপারে সরকারের সঠিক, চ্যালেঞ্জিং এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণেই আমরা রপ্তানিতে বড় সুফল পাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনা, নীতিগত সহায়তা এবং শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার আন্তরিকতাও প্রশংসা করার মতো। তখন যদি কারখানা না খুলত, তাহলে এই সেক্টরের অবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকত কল্পনাই করতে পারতাম না।’
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যে পণ্য পরিবহন করে থাকে জাহাজের মেইন লাইন অপারেটর (এমএলও)। তাদের সর্বশেষ হিসাবে, মার্চে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি পণ্য পরিবহন হয়েছে ৬১ হাজার ৭০০ একক কনটেইনার। করোনার ধাক্কায় এপ্রিলে রপ্তানিতে ধস নেমে ১৩ হাজারে নেমে আসে। মে মাসে কিছুটা বেড়ে ৩০ হাজার এককে উন্নীত হয়; জুন মাসে সেটি আরো বেড়ে ৫০ হাজার এককে উন্নীত হয়েছে। আর জুলাই মাসে রপ্তানি বেড়ে ৭২ হাজার ৩৫৯ এককে উন্নীত হয়েছে। জুলাই মাসের এই রপ্তানি শুধু ২০২০ সালের জানুয়ারি-জুন এই ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। একই সঙ্গে ২০১৯ সালের পুরো বছরের চেয়ে মাসভিত্তিক রপ্তানির চেয়েও বেশি। এই চিত্র থেকেই বোঝা যায় করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। জুলাই মাসেও আমদানির গতি গত কয়েক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল এবং অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল।
বিদেশি জাহাজ পরিচালনকারী জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মুনতাসির রুবাইয়াত বলেন,‘আমার জানা মতে অতীতে এক মাসে এত বেশি পরিমাণ পণ্য রপ্তানি আমরা করিনি। দুই কারণে এই রপ্তানি বেড়েছে। একটি হচ্ছে, বিদেশি ক্রেতারা পুরনো অর্ডারগুলো নেওয়া শুরু করেছেন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, অনলাইন বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি আগের চেয়ে ৫ শতাংশ বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আগস্টে রপ্তানির এই প্রবৃদ্ধি হয়তো থাকবে না; কিন্তু অবশ্যই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে। আর আগস্টে আমদানিও স্বাভাবিক গতিতে থাকবে। তবে জুলাইয়ে গার্মেন্ট খাতের কাঁচামাল কতটা আমদানি হয়েছে সেটি জানা গেলে আগস্টে রপ্তানির ট্রেন্ডও আগে থেকেই জানা যেত।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য উঠানামার চিত্র থেকে দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রমাণ মিলে। অর্থনীতির লাইফলাইন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে দেশের মোট আমদানির ৮২ শতাংশ আসে; আর রপ্তানি পণ্যের ৯১ শতাংশই যায় এই বন্দর দিয়ে। চট্টগ্রাম বন্দরে জুলাই মাসে এক লাখ চার হাজার ৪৯৯ একক আমদানি পণ্য উঠানামা হয়েছে। আর রপ্তানি পণ্য উঠানামা হয়েছে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার একক। এই পণ্য উঠানামার হিসাবের মধ্যে খালি কনটেইনারও যুক্ত আছে। সূত্র : কালের কণ্ঠ।
Leave a Reply