বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা থেকে সরে এলএনজির (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গতকাল সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, পরিবেশদূষণ কমাতে মহাপরিকল্পনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনার চিন্তা করছে সরকার। কিন্তু এতেও মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে না। কারণ এলএনজিতেও পরিবেশ দূষিত হয়। দূষণমুক্ত পরিবেশের জন্য সরকারের উচিত নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়া।
‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা বর্জন : সরকারি উদ্যোগ ও কতিপয় সুপারিশ’ শীর্ষক এ ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিদ্যমান মাস্টারপ্ল্যান অনুসারে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩৫ শতাংশ আসবে আমদানিকৃত এলএনজি থেকে। আরও ৩৫ শতাংশ আসবে আমদানিকৃত কয়লা থেকে। এ ছাড়া ১৫ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে, ১০ শতাংশ পারমাণবিক শক্তি থেকে এবং ৫ শতাংশ জ্বালানি তেল থেকে আসবে।
আলোচনায় গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে সরে এসে বিকল্প পদ্ধতিসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গেছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২২টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এসব প্রকল্প থেকে ২৩ হাজার ২৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা ছিল। এগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে যেগুলোর বাস্তবায়ন এখনও বেশিদূর এগোয়নি সেগুলোয় নতুন করে বিনিয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, কয়লা থেকে সরে সম্পূর্ণভাবে ক্লিন এনার্জি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সরকারকে পুরোপুরি সাধুবাদ জানাতে পারতাম।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কিন্তু সরকার কয়লার পরিবর্তে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির চিন্তা করছে। যদিও সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, এলএনজির পরিবেশদূষণের মাত্রাও প্রায় কয়লার সমান। সুতরাং এতে পরিবেশদূষণ থেকে সরে আসার সদিচ্ছার প্রকাশও ঘটে না। এক্ষেত্রে তাই যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রত্যাশিত বেসরকারি বিনিয়োগ না হওয়ার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়েনি। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা মাত্রাতিরিক্ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে রিজার্ভ মার্জিন হিসাবে সর্বাধিক ১৫ শতাংশ ওভার ক্যাপাসিটি স্ট্যান্ডার্ড রাখা হয়। বাংলাদেশ এটি ২৫ শতাংশ রাখছে। এটিকে অবাস্তব আখ্যায়িত করে ড. মোয়াজ্জেম বলেন, এটি সীমা অতিক্রম করেছে এবং রাষ্ট্রের ওপর একটি বিশাল ব্যয়ের বোঝা তৈরি করছে।
তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সরকারের নীতি অবস্থানকে গুরুত্ব দেন। যখন তারা দেখতে পান সরকারের মাস্টারপ্ল্যানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রাধিকারের জায়গায় নেই, তখন তারা এমন একটি নীতি কাঠামোতে কখনও উচ্চ বিনিয়োগ প্রকল্প নিয়ে আসার আগ্রহ দেখেন না।
কয়লাভিত্তিক প্রকল্প থেকে সরে এলে এরই মধ্যে এ খাতে যে বিনিয়োগ হয়েছে, তা অপব্যবহার হবে কিনা- এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। অনেক জমিতে উন্নয়নের কাজ হয়েছে। এখানে খুব সহজেই নবায়নযোগ্য জ্বালানির কাজ করা যায়।
Leave a Reply