আলী রিয়াজ
লুব্রিকেন্টস শিল্পে বাংলাদেশকে স্বনির্ভর করে বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে চায় লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড। সেই লক্ষ্যে বাড়াতে চায় উৎপাদন সক্ষমতা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল অয়েল-‘বিএনও’ ব্র্যান্ড বাজারজাত করা কোম্পানিটি ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে বেইজ অয়েল রিফাইনারি প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে লুব্রিকেন্টসের বিপুল সম্ভাবনা সামনে রেখে ব্যবসা সম্প্রসারণে উদ্যোগ নিয়েছে জ্বালানি খাতের কোম্পানিটি। লুবরেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড আগামী২০২৫ সালের মধ্যে লুব্রিকেন্টস বাজারের অন্তত: ২০ শতাংশ স্থান দখল করার লক্ষ্যে আধুনিক পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছে বলে জানান কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ ইউসুফ।
চট্টগ্রামের বিসিক শিল্প নগরীতে শনিবার কোম্পানির কারখানা প্রাঙ্গণে মোহাম্মদ ইউসুফ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, পেট্রোকেমিক্যাল ও লুব্রিক্যান্ট শিল্পে তাদের প্রায় চার দশকের অভিজ্ঞতা। স্থানীয় প্লান্টে বিশ্বমানের লুব্রিকেন্টস প্রস্তুত করে এরই মধ্যে বাজারের আস্থা অর্জন করেছে লুব-রেফের ব্র্যান্ড ‘বিএনও’।
এ খাতের বিপুল চাহিদার কথা বিবেচনা করে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কর্ণফুলী নদীর তীরে একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল থিম পার্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের সর্বপ্রথম বেইজ অয়েল রিফাইনারি ও বিশেষায়িত বিটুমিন প্লান্ট ও এক লাখ টনের একটি ট্যাঙ্ক টার্মিনাল প্রস্তুতের উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন বলে মোহাম্মদ ইউসুফ উল্লেখ করেন। এসব প্রকল্পের পুঁজি সংগ্রহের লক্ষ্যে পুঁজিবাজার থেকে কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে, যা ইতোমধ্যে বিন্ডিংয়ের জন্য অনুমোদন দিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সংগৃহীত টাকায় নতুন যন্ত্রপাতি কেনা, ব্যবসা সম্প্রসারণ, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের খরচ খাতে ব্যয় করবে।
কোম্পানিটির ৩০ জুন ২০১৯ সমাপ্ত সমন্বিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী যথাক্রমে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পত্তি মূল্য (পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতিসহ) ৩১ টাকা ৯৩ পয়সা ও শেয়ারপ্রতি নিট সম্পত্তির মূল্য (পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতি ছাড়া) ২৫ টাকা ৯৬ পয়সা। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ২ টাকা ৮ পয়সা।
লুব-রেফের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজার থেকে সংগৃহিত অর্থ দিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণের মাধ্যমে কোম্পানির লুব্রিকেন্ট উৎপাদন সক্ষমতা ও বিক্রি বাড়বে। ফলে লুব্রিকেন্ট অয়েল আমদানি নির্ভরতা হ্রাস পেয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে এবং দেশের শিক্ষিত ও প্রযুক্তিনির্ভর বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান বাড়বে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রাথমিক অনুমোদন পাওয়ার মাধ্যমে লুব-রেফে জনগণের অংশীদার হওয়ার সুযোগ তৈরি হলো বলে মনে করেন সিএফও মফিজুর। এদিকে বিসিক শিল্প এলাকায় প্রায় এক একর জমির ওপরে প্রতিষ্ঠিত লুব-রেফের কারখানা ঘুরে দেখা যায়, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের লুব্রিকেন্টস উৎপাদনে কাজ করছে রসায়নবিদ ও প্রকৌশলীসহ ২৫০ জনেরও বেশি জনবল। আধুনিক প্রযুক্তিতে অটোমোটিভ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও মেরিন লুব্রিকেটিং পণ্য উৎপাদন করে বাজারজাত করছে এ প্রতিষ্ঠান। লুব্রিকেন্টস শিল্পে উদ্ভাবনী প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ন্যানো ও নিনাস নামের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ প্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশে এটিই প্রথম বলে জানান কোম্পানির কর্মকর্তারা। কর্ণফুলী নদীর তীরে প্রতিষ্ঠিতব্য ‘থিম পার্কের’ নতুন প্রকল্পগুলোর নির্ধারিত ৩০ একর জমি সাংবাদিকদের দেখানো হয়।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অপেক্ষায় থাকা কোম্পানিটি মেটিরিয়াল রিসোর্স ও মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্ভাবনমুখী লুব্রিকেটিং পণ্য উৎপাদন করে দেশের শিল্প উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানসহ রাজস্ব খাতে বড় অবদান রাখছে বলে জানান মোহাম্মদ ইউসুফ।
কোম্পানিটির এ উদ্যোক্তা আরও বলেন, সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের একটি কোম্পানির সঙ্গে প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে ন্যানো টেকনোলজি সমৃদ্ধ লুব্রিকেটিং অয়েলসামগ্রী উৎপাদন ও বিপণন শুরু করেছে। তা ছাড়া দেশের বৈদ্যুতিক খাতে অত্যন্ত আমদানিনির্ভর ট্রান্সফরমার অয়েল প্রস্তুত ও সেনটিফিউজিংয়ের মাধ্যমে প্রচুর বৈদশিক মুদ্রা সাশ্রয় করছে। তাদের নতুন এই উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের ইঞ্জিন অয়েলেরবাজারে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
Leave a Reply