পুলিশের অপরাধী তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য নারী-পুরুষকে বিভিন্ন দেশে পাচারের সঙ্গে বিদেশি দুটি এয়ারলাইন্সের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠান দুটির সাত কর্মকর্তাকে সিআইডি সদর দফতরে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তারাও বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। তবে এয়ারলাইন্স দুটির নাম বলেননি সিআইডি প্রধান। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান এসব কথা বলেন।
এর আগে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানব পাচারে জড়িত পলাতক ছয় বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করে ইন্টারপোল। তারা হলো- মিন্টু মিয়া, তানজিমুল ওরফে তানজিদ, জাফর ইকবাল, নজরুল ইসলাম মোল্লা, শাহাদাত হোসেন ও স্বপন। তাদের মধ্যে নজরুলের বাড়ি মাদারীপুরে, শাহাদাতের বাড়ি ঢাকায়, বাকি চারজনের কিশোরগঞ্জে। তানজিমুল বর্তমানে ইতালিতে রয়েছে।
সিআইডি প্রধান জানান, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে মানব পাচারের সঙ্গে বিদেশি দুটি এয়ারলাইন্স জড়িত। যাদের দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে, তাদের সবাইকেই ভিজিট ভিসা বা কনফারেন্স ভিসায় নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব ভিসায় কেউ কোনো দেশে গেলে তাদের রিটার্ন টিকেট থাকার কথা। তবে কোনো ব্যক্তি রিটার্ন টিকেট নেয়নি। এটা এয়ারলাইন্সের ত্রুটি। তাদের কর্মকর্তারা জড়িত। পাচার হওয়া অধিকাংশ ব্যক্তি এই দুটি এয়ারলাইন্সে গেছে। আমরা এয়ারলাইন্স দুটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারাও স্বীকার করেছে, এমন হওয়ার কথা নয়। সিআইডি প্রধান জানান, গত ১৮ অক্টোবর বাংলাদেশ পুলিশ ইন্টারপোলের কাছে ছয় মানব পাচারকারীকে গ্রেফতারে সহায়তা চায়। গত ২৭ নভেম্বর ইন্টারপোল রেড নোটিস জারি করে। এখন পর্যন্ত ছয়জনকেই পাওয়া গেছে, যাদের সংশ্লিষ্টতা আছে। তাদের মতো আর কেউ বিদেশে রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছি।
২০১৯ সালের মে মাস থেকে বিভিন্ন সময় ৩৮ বাংলাদেশি নাগরিককে লিবিয়ায় পাচার করা হয়। তাদের ইতালি ও স্পেনে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ার বেনগাজিতে নিয়ে যাওয়া হয়। মুক্তিপণের জন্য গত ২৬ মে নির্বিচারে গুলি করে ২৬ জনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মানব পাচারের অভিযোগে সারা দেশে ২৬টি মামলা হয়। এর মধ্যে সিআইডি বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। বাকিগুলো ভুক্তভোগীদের পরিবার করে।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ মে লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যার ঘটনার পর মানব পাচারের ২৬ মামলার মধ্যে ২৫টি তদন্ত করছে সিআইডি। এখন পর্যন্ত ১৭১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হবিগঞ্জে করা একটি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে ৪২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
Leave a Reply