নতুন গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এটি একটি ভয়াবহ সংকট। উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তানের মধ্যে অবস্থিত এরল সাগরের পূর্বের কয়েকশ কিলোমিটারের মতো একটি ইকোসাইড হিসাবে বিধ্বস্ত হতে পারে ক্যাস্পিয়ান সাগরও। প্রতি বছর ক্যাস্পিয়ানের পৃষ্ঠতল সাত সেন্টিমিটার করে হ্রাস পাচ্ছে। এই প্রবণতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাঁচ বছরে এটি আজকের চেয়ে প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার কম এবং দশ বছরে প্রায় এক মিটার কম হতে পারে। শতাব্দীর শেষের দিকে সমুদ্রপৃষ্ঠএক মিটার বা তারও বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে। বিপরীত দিকে ক্যাস্পিয়ান সাগর এক মিটার নিচে নেমে যেতে পারে মাত্র এক দশকেই!
জলবায়ু পরিবর্তনই এজন্য দায়ী। ক্যাস্পিয়ান সাগর একটি বিচ্ছিন্ন হ্রদ। এর পৃষ্ঠতল ইতিমধ্যে মহাসাগরের প্রায় ২৮ মিটার নিচে অবস্থান করছে। এর পানির স্তর নির্ভর করে নদী থেকে কতটা পানি প্রবাহিত হচ্ছে, কত বৃষ্টিপাত হয় এবং কতটা বাষ্পীভবন হয় তার উপর। শতাব্দীর শেষভাগে এই অঞ্চলে প্রায় তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি সম্ভাবনা রয়েছে। এরফলে বাষ্পীভবন বাড়বে। পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাবে।
ক্যাস্পিয়ান সাগরের উত্থান এবং পতনের ইতিহাস রয়েছে। রাশিয়ার ককেশাস উপকূলে ডারবেন্টে নিমজ্জিত প্রাচীন শহরের প্রাচীরগুলি মধ্যযুগীয় সময়ে সমুদ্র কত নীচে ছিল তার সাক্ষ্য দেয়। প্রায় ১০ হাজার বছর আগে ক্যাস্পিয়ান প্রায় ১০০ মিটার নীচে ছিল। এর কয়েক হাজার বছর আগে এটি আজকের চেয়ে প্রায় ৫০ মিটার উঁচু ছিল। এমনকি এটি কৃষ্ণসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল।
ক্যাস্পিয়ান সাগরের পাশে বসবাসকারী লোকজন এই উত্থান-পতন কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিল। গত দুই মিলিয়ন বছর ধরে সাগরের এই উত্থান-পতনের সঙ্গে সামুদ্রিক প্রাণীরাও প্রয়োজনে কখনও উপরে কখনও নিচে নেমেছে। ক্যাস্পিয়ান সাগরের উত্থান-পতন এর আগে মানব সমাজের তেমন কোনো ক্ষতি করেনি বলেই মনে হয়। কারণ, আগের ধ্বংসাবশেষে কোনো মানব বসতি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে পরিবর্তনটি ভিন্ন রকমের। এই পতন ক্যাস্পিয়ান সাগরের প্রাণী ও উদ্ভিদ জগৎ এবং উপকূলের পাশাপাশি মানবসমাজের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
ক্যাস্পিয়ান সাগরের কিছু অঞ্চলে উপকূলরেখা বরাবর বছরে কয়েক শত মিটার পর্যন্ত সৈকতে পরিণত হচ্ছে। আজকের সৈকত কালকের অনুর্বর সমভূমিতে পরিণত হবে। এই পতন ক্যাস্পিয়ান সাগরের চারপাশে নিম্নভূমির নদী এবং ডেল্টাতেও প্রভাব ফেলবে। উর্বর সমভূমিগুলি তরমুজ এবং ধান চাষ চালিয়ে যাওয়ার জন্য খুব শুষ্ক হয়ে উঠবে। ইরানের উপকূলবর্তী শহর রামসা। বিশ্ব জলাভূমি সম্মেলনে এর নামকরণ হয়েছে। ক্যাস্পিয়ান সাগরে পৃষ্ঠতল কমে যাওয়ার সাথে সাথে শহরটি ল্যান্ডলকড হয়ে উঠবে। এর আশেপাশের জলাভূমি কয়েক দশকের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
পুরো উত্তর এবং পূর্ব ক্যাস্পিয়ান সাগরশুকনো অনুর্বর জমিতে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। এর ফলে খাদ্যের অভাবে মাছের প্রজাতি, ক্যাস্পিয়ান সিল এবং সমুদ্রের তুলনায় অনন্য মোলাস্কস এবং ক্রাস্টেসিয়ান প্রজাতিগুলি ধ্বংসের মুখে পড়বে। ক্যাস্পিয়ান সাগরের এই প্রাণীজগৎ বিগত শতাব্দীতে দূষণ, শিকার ও আক্রমণাত্মক প্রজাতির দ্বারা ইতিমধ্যে বেশ ভুগেছে। উত্তর ক্যাস্পিয়ানে শীতের বরফে প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্যাস্পিয়ান সিল উত্থিত হয়। অথচ শীতের বরফ এবং পুরো উত্তর ক্যাস্পিয়ানই অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।
ক্যাস্পিয়ান সাগরে সংকটের কারণ হলো জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন। বৈশ্বিক উদ্যোগে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যেতে পারে। সময় চলে যাওয়ার আগেই সকলের এটা নিয়ে ভাবা উচিত।
Leave a Reply