বছরে রাজস্ব আয় ১০০ কোটি টাকা, কর্মসংস্থান ছয় হাজার শ্রমিক
ঢাকার কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে কালিগঞ্জ, হাসনাবাদ ও জাজিরা এলাকায় ৮০টি ডক-ইয়ার্ডে তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানে আধুনিক জাহাজ ও তিনতলাবিশিষ্ট মেঘা লঞ্চ। প্রতিবছর এসব ডক থেকে শতাধিক লঞ্চ ও জাহাজ তৈরি হচ্ছে। এসব ডগ থেকে সরকার প্রায় কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করছে।
ডক-মালিক সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেনের দাবি, সরকার পরিকল্পিতভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলা অথবা মুন্সিগঞ্জ জেলার মেঘনা নদীর পাড়ে ডকইয়ার্ডগুলোকে স্থানান্তর করে দিলে ডক মালিকরা আরও বিশ্বমানে জাহাজ তৈরি করতে পারবে। এর মাধ্যমে গার্মেন্টস শিল্পের মতো জাহাজ শিল্প থেকেও সরকার বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে।
১৯৫২ সালে পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাটি থানার লঞ্চ ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান ঢাকার কেরানীগঞ্জের কালিগঞ্জ এলাকায় রহমান ডকইয়ার্ডে প্রথম এমভি যুগ্ন নামে একটি দেড় তলা কাঠবডি লঞ্চ তৈরি করে ঢাকা ও পিরোজপুর জেলায় যাত্রীসেবায় শুরু করেন। পরবর্তীতে জাহার এ রহমান নামে একটি শিপ ডকে এনে কাটিং করে এম ভি সামাদ লঞ্চ নামে নামকরণ করেন। পরে তা ঢাকা থেকে বরিশাল নৌরুটে যাত্রী-পরিবহন শুরু করে। ১৯৭২ সালে এ রহমান ডকে তৈরি করা হয় দুইতলাবিশিষ্ট কাঠবডি লঞ্চ এমভি জলকপোত, এমভি নীলাম্বরী ও এমভি বসুন্ধরা।১৯৮২ সালে রহমান ডকইয়ার্ড থেকে তৈরি করা হয় স্টিলবডির দুইতলাবিশিষ্ট ১১টি লঞ্চ। উচ্চগতি সম্পন্ন এসব লঞ্চ চাঁদপুর, বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা ও পটুয়াখালী নৌরুটে যাত্রীসেবা দিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই এক এক করে কেরানীগঞ্জের ৮০টি ডক ইয়ার্ড থেকে গত ৬০ বছরে ১২০০ জাহাজ ও ৪৫০ টি লঞ্চ তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে কেরানীগঞ্জের ডক থেকে তিনতলাবিশিষ্ট আধুনিক লঞ্চ এম ভি সূরভী, এমভি সুন্দরবন, এমভি পারাবাত, এমভি রাসেল, এমভি কাজন, এমভি অ্যাডভেঞ্চার ও এমভি গ্রিনল্যান্ডসহ আরও ৩০ থেকে ৪০টি তিনতলাবিশিষ্ট বিলাশবহুল লঞ্চ ও জাহাজ নির্মাণ কাজ চলছে, যেখানে কাজ করছেন প্রায় ছয় হাজার জাহাজ নির্মাণ শ্রমিক।
নির্মাণ শ্রমিক বাবুল জানান, উন্নত বিশ্বের মতো প্ল্যানিং ও ড্রইং করে মেশিন কাটিংয়ের মাধ্যমে জাহাজ ও রণতরী নির্মাণ করা হয়। আমাদের দেশে আমরা সম্পূর্ণ ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে তাদের মতো লঞ্চ ও জাহাজ তৈরি হচ্ছে। বিদেশি একটি জাহাজ তৈরি খরচ পড়ে ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা। সেখানে আমরা একই মানের জাহাজ তৈরি করছি ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকায়। আর এ কারণে অর্ধেক দামে আমারা জাহাজ দিতে পারছি।
ডক মালিক সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন জানান, বুড়িগঙ্গা নদীতে দিনদিন নৌযান চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় কেরানীগঞ্জ থেকে ডক ইয়ার্ড সরিয়ে নিতে ৮০টি ডগকে চাপসৃষ্টি করে আসছে বিআইডব্লউটিএ। সেক্ষেত্রে সরকার যদি নারায়ণগঞ্জ জেলা অথবা মুন্সীগঞ্জ জেলার মেঘনা নদীর পাড়ে আমার ডগগুলো পরিকল্পিতভাবে সরিয়ে নিতে দেয়, তাহলে আমাদের জাহাজ শিল্প থেকে সরকার আরও কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারবে।
Leave a Reply