বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) এক চিঠিতে হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পুরো জ্বালানি খাত। চিঠিতে বিপিসির অধীন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে শ্রমিক-কর্মচারীদের চুক্তির ক্ষেত্রে কী কী ‘অতিরিক্ত সুবিধা’ দেওয়া হয়েছে এবং আরও কী কী ‘অযৌক্তিক সুবিধা’ দাবি করা হচ্ছে, তা নির্ধারণে কমিটি করে দেয় সংস্থাটি। একে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা কাটছাঁটের পাঁয়তারা হিসেবে দেখছেন পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ বিপিসির অধীন সাতটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীরা। চিঠিটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ক্ষোভে ফুঁসছেন শ্রমিকরা। বিষয়টিকে বিপিসির অযাচিত হস্তক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত
করে ওই অফিস আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তারা। নাহলে কর্মবিরতি পালনসহ বিপিসি ঘেরাওয়ের মতো কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। যদিও বিপিসি থেকে বলা হচ্ছে, কেবল অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য অফিস আদেশটি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের দুর্ভাবনার কারণ নেই।
শ্রমিক-কর্মচারীরা বলছেন, দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এর আগে চুক্তির মাধ্যমে ভোগ করা কোনো সুযোগ-সুবিধাকে ‘অতিরিক্ত সুবিধা’ বলা যাবে না। চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলাকালে শ্রমিক-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা চাওয়া হয়ে থাকে। কোনো দাবি অযৌক্তিক মনে হলে তা কর্তৃপক্ষ মেনে নেয় না। তাই বিপিসি আগ বাড়িয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের সুবিধাকে ‘অযৌক্তিক’ দাবি করে তা শনাক্ত করার নামে যে কমিটি করেছে, সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। শ্রমিকদের মতে, বিপিসির অধীন হলেও তেল বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। এগুলো কোম্পানি আইন দিয়ে পরিচালিত হয়। এ কারণে বিপিসি চাইলেই ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না।
দুই বছর পর পর বিপিসির অধীন তেল কোম্পানি গুলোতে শ্রমিক-কর্মচারীদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের (সিবিএ) সঙ্গে সংশ্নিষ্ট কোম্পানি কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ হয়ে থাকে। কোনো কারণে সমঝোতা না হলে শ্রম অধিদপ্তরের প্রতিনিধির মধ্যস্থতায়, অর্থাৎ ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় এই সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করা হয়। শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রতিনিধি ও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ একমত হওয়ার পর সেটা প্রস্তাব আকারে কোম্পানিগুলোর নিজ নিজ বোর্ডসভায় উত্থাপন ও অনুমোদন করা হয়। কিন্তু দুই বছর পার হয়ে পাঁচ-ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও এবার কোনো কোম্পানিতেই শ্রমিকদের সঙ্গে কোম্পানিগুলোর কোনো চুক্তি হয়নি। নানা টালবাহানায় তা আটকে রাখায় হতাশায় ভুগছেন এ খাতের প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক-কর্মচারী।
জানা যায়, গত ১৭ মে ঊর্ধ্বতন মহাব্যবস্থাপককে (নিরীক্ষা) আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয় বিপিসি। বিপিসির সচিব মো. লাল হোসেন এই কমিটি গঠন করে দেন। এতে পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ বিপিসির সাত অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকেও সদস্য রাখা হয়েছে। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। অফিস আদেশ জারির পর থেকে কোম্পানিগুলোতে প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। গত বৃহস্পতিবার মেঘনা ও যমুনায় পালন করা হয়েছে প্রতিবাদ সভা। ধারাবাহিকভাবে একই কর্মসূচি পালন করা হবে অন্য কোম্পানিগুলোতেও।
রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অয়েল অ্যান্ড গ্যাস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের ব্যানারে আন্দোলন করছেন তেল খাতের শ্রমিক-কর্মচারীরা। এই সংগঠনের সভাপতি সাদেকুর রহমান ও মহাসচিব মুহাম্মদ এয়াকুব বলেন, শ্রমিক-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিপিসির পক্ষ থেকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেটা নিতান্তই অযাচিত। তা ছাড়া বিপিসি সচিব মানহানিকর যে শব্দ ব্যবহার করে অফিস আদেশ জারি করেছেন, সেটি নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের আপত্তি রয়েছে। তাই সেই অফিস আদেশ বাতিল করতে হবে। নতুবা আন্দোলনের চলমান কর্মসূচি আরও কঠোর হবে।
এ বিষয়ে বিপিসি সচিব মো. লাল হোসেন বলেন, ‘কোম্পানিগুলো বিধিবদ্ধ নিয়মে চলে। তাই কোম্পানিগুলো চাইলেই কাউকে ইচ্ছেমতো সুযোগ-সুবিধা দিতে পারে না। শ্রমিক-কর্মচারীদের দেওয়া প্রান্তিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে অনেক অডিট আপত্তি রয়েছে। এই অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করতেই শ্রমিক-কর্মচারীরা কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন, তা জানতে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। চিঠির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নেই।’
Leave a Reply