চীনের তৈরী টিকা আনতে বেইজিং এর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে বিমান। সকালে বোয়িং ৭৩৭ মডেলের একিট উড়োজাহাজ নিয়ে বিমানের দুই পাইলট ঢাকা ছেড়েছে। সাথে আছেন সংশ্লিস্ট ক্রুগণ। ফ্লাইটটি বিরতি না দিয়ে রাত ১২ টায় ঢাকায় পৌছার কথা রয়েছে। এছাড়া আরেকটি ফ্লাইট একই উদ্দশ্যে সন্ধ্যায় চীনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে। বিমানের পাইলটদের সংগঠন বাংলাদেশ পাইলট এসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান এভিয়েশন নিউজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশের এই চরম সংকট কালে যত কষ্ট হোক পাইলটরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সব উদ্যোগে সাড়া দিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, বিমান ম্যানেজমেন্ট পাইলটদের সঙ্গে চরম বৈষম্যমুলক আচরণ করেছে। সবার বেতন কর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হলেও পাইলটদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়নি। উল্টো বেতন ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কর্তৃন করা হচ্ছে্।
ক্যাপ্টেন মাহবুব বলেন, করোনার কারণে যখন বিশ্বব্যাপী দুঃসময় যাচ্ছিল তখন পাইলটরা ঝুঁকি নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন। এক বছরে ২৫ জন পাইলট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এখনও অনেকে করোনা পজিটিভ নিয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। ৮ জন পাইলটের পুরো পরিবার করোনায় আক্রান্ত। ফ্লাইট করে এসে কোয়ারেন্টিনের সুযোগও ছিল না। ফ্লাইট নিয়ে বিদেশে গিয়ে নিজের টাকায় করোনা টেস্ট করতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও তাদের প্রতি চরম বৈষম্য মুলক আচরণ করা হচ্ছে।
বাপার এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেলন, ঢাকা-লন্ডন-ঢাকা সরাসরি ফ্লাইট করতে কমপক্ষে ৬ জন পাইলট লাগে। সেখানে ৩ জনকে দিয়ে ফ্লাইট চালানো হয়েছে। বিশ্রাম ছাড়া টানা ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ফ্লাই করেছেন। পাইলটরা এ ক্ষেত্রে ‘ফেটিক রিপোর্ট ফরম’ বা ক্লান্তিজনিত ফরম দাখিল করলেও তা ছুড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। করোনায় পাইলট ও তাদের পরিবারের সদস্যরা কোথায় চিকিৎসা পাবে সে ব্যাপারে ন্যূনতম সহযোগিতাও করেনি বিমান। উল্টো চিকিৎসা ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে।
জানা গেছে, বিমান ২০২০ সালের এপ্রিলে সর্বন্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মূল বেতনের ১০ শতাংশ কর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। যেহেতু বিমান ও বাপার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে তাই বাপার সঙ্গে আলোচনা হয়, তাতে বিমানের পাইলটরা ১২ শতাংশ আর কো পাইলটদের ১০ শতাংশ হারে বেতন কর্তনে দুই পক্ষ সম্মত হয়। কিন্তু মে মাস থেকে বিমান পরিচালনা পর্যদ আলোচনা ছাড়াই পাইলটদের চাকরির বয়সভেদে ২৫-৫০ শতাংশ কর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। বাস্তবে কর্তনের হার ছিল ৫০-৭০ শতাংশ।
বাপা সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান বলেন, ২০০৮ সাল থেকে বিমান পাইলটদের পূর্বের বেতন কাঠামো থেকে আউটার স্টেশন এলাউন্সসহ ৯টি ভাতা বাদ দিয়ে প্যাকেজ বেতন দিয়ে আসছে। বিমান ট্যাক্স রেয়াত পাওয়ার সুবিধায় বেতনের আরেকটি অংশ ওভারসিস এলাউন্স নামে বিদেশ থেকে ডলারের মাধ্যমে পরিশোধ করা হতো। কিন্তু একজন বাংলাদেশি বেতনের অংশ হিসাবে ডলার পেতে পারেন না এমন আইনি জটিলতার কারণে ২০১৭ সাল থেকে এ এলাউন্স বেতনের অংশ হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রদান করা শুরু করে। বেতন কাঠামো অনুয়ায়ী এই এলাউন্স পাইলটদের বেতনেরই অংশ।
এটি বিদেশ যাওয়া বা ফ্লাইটের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু নয়। অথচ বিমান ম্যানেজমেন্ট আলোচনা ছাড়াই প্রশাসনিক আদেশ দিয়ে মূল বেতন থেকে প্রথমে ওভারসিস এলাউন্স ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা কর্তন করে। পরে বয়স অনুযায়ী মোট বেতন থেকে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ হারে কর্তন করা হয়। এখন সবার বেতন কর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হলেও পাইলটদের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি বিমান। তিনি অবিলম্বে পাইলটদের বেতন কর্তনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি জানান। উৎস: এভিয়েশননিউজডটকম
Leave a Reply