কনটেইনার সংকটের পাশাপাশি জাহাজে চাহিদা মতো জায়গা না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির কার্যক্রম ভয়াবহ দীর্ঘসূত্রিতার মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় বিদেশি ক্রেতাদের কাছে যথাযথ সময়ে পণ্য পাঠানো নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন রপ্তানিকারকরা।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এই সংকটের কারণে চট্টগ্রামের ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপোর ভেতরে-বাইরে রপ্তানি পণ্যের স্তূপ জমে গেছে।
সাধারণত কারখানা থেকে প্রথমে রপ্তানি পণ্য ডিপোগুলোতে পাঠানো হয়। ডিপোতে আনার পর কাভার্ড ভ্যান থেকে পণ্য নামিয়ে শেডে রাখা হয়। সেখানে বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিনিধিদের (ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার) হাতে পণ্য বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর প্রতিনিধিরা কনটেইনার ভাড়া নিয়ে শেডে থাকা রপ্তানি পণ্য কনটেইনারে বোঝাই করার ব্যবস্থা করেন। একই সময়ে শুল্কায়ন কার্যক্রম হয়। এরপর ডিপো থেকে বন্দরে নিয়ে নির্ধারিত জাহাজে তুলে দেওয়া হয় কনটেইনার।
চট্টগ্রাম ভিত্তিক তৈরি পোশাক রপ্তানি কারক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিনস লিমিটেড চার দিন আগে ২৭টি কাভার্ড ভ্যান বোঝাই রপ্তানি পণ্য চারটি ডিপোতে পাঠায়। কিন্তু ডিপোতে জায়গা না থাকায় এখনো গাড়ি থেকে পণ্য নামানো যায়নি।
প্যাসিফিক জিনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর জানান, কনটেইনার সংকটের জন্য কলম্বো, সিংগাপুরসহ বিভিন্ন ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোতে জটের কারণে বিশ্বব্যাপী সমুদ্র পথে পণ্য পরিবহনের সাপ্লাই চেইনে বিঘ্ন ঘটছে। যে কারণে রপ্তানি পণ্য কাঙ্ক্ষিত দেশগুলোতে ১৫ থেকে ৩০ দিন দেরিতে পৌঁছাচ্ছে।
এক মাস ধরেই সমস্যাটি চলছে উল্লেখ করে তিনি জানান, এই বিলম্বের কারণে দেশে তৈরি রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরনের সমস্যাটি আরও ঘনীভূত হবে।
চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার আরএসবি ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন শেখর দাস জানান, গত তিন দিন ধরে দুটি ডিপোর সামনে তাদের পাঁচ ট্রাক পণ্য পড়ে আছে।
এ অবস্থায় ইউরোপের ক্রেতার কাছে যথাসময়ে পণ্যগুলো পাঠানোর ব্যাপারে আশঙ্কার কথা জানান অঞ্জন।
বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কইটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব মো. রুহুল আমিন শিকদার বলেন, বেশিরভাগ ডিপোগুলোতে রপ্তানি পণ্য উপচে পড়েছে। জাহাজে কনটেইনার বুকিং না দিতে পারায় ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাররা সময়মতো কার্গো লোডিং প্ল্যান দিতে পারছেন না। ফলে ডিপোতে রপ্তানি পণ্য স্বাভাবিকের চাইতে বেশি সময় ধরে পড়ে থাকছে।
রুহুল আমিন শিকদার জানান, কনটেইনার সংকটের এই বিষয়টি কেবল বাংলাদেশেই আটকে নেই। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সাপ্লাই চেইন বিঘ্নিত হওয়ার জন্য গত বছরের নভেম্বর থেকেই বৈশ্বিক শিপিং সেক্টরে এই সমস্যা চলছে। শিকদার বলেন, স্বাভাবিক সময়ে রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরনে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। কিন্তু কনটেইনার সংকটের কারণে তা আরও বেশি সময় ধরে শেডেই থেকে যাচ্ছে। আবার কনটেইনার পাওয়া গেলেও সময়মতো জাহাজে বুকিং পেতে দেরি হওয়ায় পণ্য ভর্তি কনটেইনারগুলো ডিপো ইয়ার্ডগুলোতে পড়ে থাকছে আরও কিছুদিন। যেসব ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কার্গোগুলো বহন করে এনেছে সেগুলোও এখন লম্বা সারিতে অপেক্ষমাণ।
বিকডার হিসাব অনুসারে এই মুহূর্তে ডিপোগুলোতে ১৪ হাজার টিইইউস রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার আটকা আছে। অথচ স্বাভাবিক সময়ে ডিপোগুলোতে গড়ে ছয় থেকে সাত হাজার টিইইউস রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার থাকে। সবগুলো ডিপোর ধারণ ক্ষমতা আট হাজার টিইইউস কনটেইনারের। বিকডার সচিবের হিসাবে, এখন তারা ছয় থেকে সাত হাজার টিইইউস কনটেইনারের ঘাটতিতে আছেন।
সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের পরিচালন কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মজুমদার জানান, গতকাল পর্যন্ত তাদের ডিপোতে দুই হাজার ৪০০ টিইইউসের বেশি রপ্তানিমুখী কনটেইনার পড়ে ছিল। স্বাভাবিক সময়ে এই ডিপোতে গড়ে ৯০০ টিইইউস পণ্যবাহী কনটেইনার থাকে। কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ডিপোর বাইরে এখন পণ্যবোঝাই ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের দীর্ঘ সারি।’ এ কারণে ডিপোগুলোর ভেতরে স্বাভাবিক কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান বিকডার সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান। তিনি বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের বিলম্ব পুরো ব্যাপারটার ওপরেই একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।’
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলমও বলেন, ‘কনটেইনার সংকট একটা বৈশ্বিক সমস্যা। যে কারণে পণ্য জাহাজীকরনে সমস্যা থেকে যাচ্ছে। উৎস : ডেইলি স্টার বাংলা।
Leave a Reply