খাগড়াছড়ির সবচেয়ে
বড় ও সুন্দর
ঝরনার সন্ধান
পাহাড় ঝিরি ঝরনা উপত্যকা ও অরণ্যের সবুজ জনপদ খাগড়াছড়ি। জেলায় দুর্গম বুনো পাহাড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি ঝরনা। এবার সন্ধান মিলেছে খাগড়াছড়ির সবচেয়ে বড় ও সুন্দর ঝরনা ‘শিলাছড়ি’ ঝরনা। শিলা বা পাথরে মোড়ানো ঝিরার নাম অনুসারে ঝরনার নাম রাখা হয়েছে শিলাছড়ি ঝরনা। অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় নতুন আকর্ষণ এটি। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও রাঙামাটির লংগদুর সীমান্তবর্তী জনপদ শীলাছড়িতে এর সন্ধান মিলেছে।

লোকালয় থেকে হেঁটে ঝরনায় পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। এখানে উঁচু-নিচু পাহাড়ের পরিবর্তে হাঁটতে হবে ঝিরিপথে। তাই হাঁটার কষ্ট কিছুটা কম। ঝিরির শীতল পানিতে হাঁটতে হাঁটতে দেখা মিলবে উঁচু পাহাড়। টারশিয়ান যুগের পাথরে মোড়ানো পাহাড়। ঝিরি পথের সহজ পথ পেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মুগ্ধ হবে পথিক। পাহাড়ি গ্রাম, ছড়ার সে াত পেরিয়ে মূল ঝিরিতে নামলেই চোখ ছানাবড়া হবে। প্রায় ২০ থেকে ৪০ ফুট প্রস্থের ঝিরি বড় বড় পাথরে ঠাসা। পাহাড়ের কোথাও এমনটা দেখা মেলা ভার। স্থানীয়রা জানান, এখান থেকে কারও পাথর তোলা সম্পূর্ণ নিষেধ।

বড় বড় পাথরের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসছে স্ফটিক স্বচ্ছ জলের ধারা। ছন্দে ছন্দে পাথর বেয়ে নেমে আসে ঝরনা ধারা। প্রকৃতির নীরবতা ভেঙে এখানে সৃষ্টি হয় অপূর্ব সুর-তাল-লয়। পাথরে মোড়ানো ঝিরিতে হাঁটতে হাঁটতে মনে হবে ফিরে গেছি সেই টারশিয়ান যুগে। ‘শিলাছড়ি’ ঝরনার কাছাকাছি যেতেই ভেসে আসে জলের শব্দ। পাথরে বেয়ে উপরে উঠে ঝরনা দর্শন করতে হয়। সবুজ ক্যানভাসে শ্বেত-শুভ্র ঝরনা। বর্ষার কারণে চারপাশে সবুজ। এরই মাঝে পাহাড় থেকে নেমে আসছে জলের ধারা। ঝরনার উচ্চতা ১২০ ফুটের বেশি। প্রস্থ প্রায় ৭০ ফুট। চোখে না দেখলে ঝরনার এত বড় অবয়ব কল্পনাও করা যাবে না। নীলাকাশ আর সূর্যের আলোতে ঝরনার জল আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। এখানে এসে মুগ্ধ পর্যটকরা। করোনাকালে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকার পর বুনোপথ পেরিয়ে ঝরনা দেখতে অনেকেই ছুটছে এখন।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মুন্না, সীমা ও তাসনিম জানান, করোনাকালে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি। পাহাড়ে বেড়াতে এসে এত সুন্দর একটা ঝরনা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম সুন্দর ঝরনা এটি। এখানে আসার পথও বেশ রোমাঞ্চকর। তবে পাহাড়ি ঝিরি ও পাথুরে পথে সাবধানে হাঁটতে হয়। রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা পেরিয়ে এখানে আসার পর সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে। স্থানীয় যুবক রিন্টু চাকমা, নাচ্চু চাকমা ও রুমেল চাকমা বলেন, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির সীমান্তে ‘শিলাছড়ি’ ঝরনা। এখানে যাতায়াতের পথ বেশ দুর্গম। শিলাছড়ি ঝরনায় পৌঁছানোর আগেও আরও কয়েকটি ছোট-বড় ঝরনা দেখা যায়। স্থানীয়রা এখানকার প্রকৃতি রক্ষার বিষয়ে বেশ সচেতন। ঝিরি থেকে পাথর তোলা নিষেধ। ঝিরিতে পাথর থাকায় সারা বছরই পানির প্রবাহ থাকে।

‘ন্যাচার ট্র্যাভেল বাংলাদেশ’ ও পরিচালক মইনুল হাসান জানান, খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বিভিন্ন ঝরনা ঘুরেছি।
তবে এত বড় আর সুন্দর ঝরনা আগে দেখিনি। ঝরনায় আসার পথ খুবই রোমাঞ্চকর। অনেকদিন ঘরবন্দি ছিলাম। এ রকম একটি ঝরনা দেখে সবাই মুগ্ধ। সারা বছরই এখানে পানি থাকবে। প্রাকৃতিক ঝরনা রক্ষায় বন ও পরিবেশ সুরক্ষা এবং বনায়নের পরামর্শ দিয়েছে খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সরোয়ার আলম। তিনি জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রচুর প্রাকৃতিক ঝরনা রয়েছে। এসব ঝরনায় বর্ষায় যেভাবে পানি প্রবাহিত হয় তা ধরে রাখতে গেলে আমাদের বন রক্ষা করতে হবে। নতুন করে বনায়ন ও পরিবেশ সুরক্ষা করতে হবে। ঝরনাগুলো রক্ষা করা গেলে পর্যটক আকর্ষণও বাড়বে।
Leave a Reply