ট্রাকচালক লিটন হত্যা, আয়কর বৃদ্ধি, পুলিশের হয়রানি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি করেছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, ট্যাংকলরি, প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ। দাবি না মানা হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন মালিক ও শ্রমিক নেতারা। শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় তারা এই দাবি জানান।
সভায় শ্রমিক নেতারা বলেন, ট্রাক ড্রাইভার লিটন হত্যার বিষয়টি নিয়ে দেশের পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস পুলিশি হেফাজত অপরাধীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। কিন্তু এই উত্তরা পূর্বথানা হেফাজতে থেকে ড্রাইভার লিটনকে অমানুষিক অত্যাচার করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আর এই হত্যাকাণ্ডকে পুলিশ আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চাইছে। আমরা বলতে চাই পুলিশ হেফাজতে থেকে কীভাবে একজন লোক কম্বল ছিঁড়ে আত্মহত্যা করবে তা আমাদের বোধগম্য নয়। পুলিশের এই কল্পকাহিনি মালিক-শ্রমিকরা বিশ্বাস করতে চায় না।
ট্রাক ড্রাইভার লিটন হত্যার বিষয়টি নিয়ে দেশের পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে
তারা বলেন, আমরা মাদক বহনকারী বা মাদক কারবারি কারো পক্ষে নই। যে আইনে চালককে আটক করা হয়েছে তা সে আইনে বিচার হবে বা হওয়া উচিত ছিল বলে আমরা মনে করি। কোনো চালক গাড়িতে মাদক বহন করে প্রশাসনের হাতে ধরা পড়লে তা তদন্তে প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী বিচার হবে। কিন্তু তাই বলে একজন চালককে হত্যা তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই শিগগির সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
নেতারা আরও বলেন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ বা মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সাথে আলোচনা না করে গোপনে গাড়ির আয়কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বর্ধিত আয়কর না নিয়ে এই করোনা মহামারি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে যখন প্রতিটি মানুষ অসচ্ছল অবস্থায় জীবন জীবিকা করছে সেখানে সরকার নতুন করে বিগত বিভিন্ন জানা অর্থবছরগুলো বর্ধিত আয়কর সংযুক্ত করে এই বছর আদায় করার জন্য সফটওয়্যারে সংযুক্ত করা হয়েছে। যেখানে এই করোনা মহামারিতে সরকার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের জন্য সহযোগিতা করার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা সেখানে নতুন বর্ধিত আয়কর সংযুক্ত করে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের অসহায় অবস্থায় ফেলে দিয়ে একটি বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে তার সাথে আবার সংযুক্ত করা হয়েছে কাগজপত্রের জরিমানা। আগামী ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত জরিমানা ব্যতীত কাগজপত্র হালনাগাদ বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ সুযোগ করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও তা করা হয়নি বলে জানান তারা এবং বর্ধিত আয়কর প্রত্যাহার করে আগের মতো জরিমানা ছাড়া গাড়ির কাগজপত্র হালনাগাদ করার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান।
এছাড়া গত দুই বছর ধরে বিআরটিএ ড্রাইভারদের লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করে রেখেছে। লাইসেন্স প্রদান বন্ধ থাকায় স্লিপের সাহায্যে গাড়ি চালাতে গিয়ে ড্রাইভারদের রাস্তায় রাস্তায় পুলিশি মামলা ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তাই দ্রুত জটিলতা নিরসন ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
গত এক বছর পরিবহনের সংগঠনগুলো বিশেষ করে পণ্য পরিবহন সংগঠনের সার্ভিস চার্জ আদায় সরকার বন্ধ করে রেখেছে। কিন্তু সরকার এক দিক দিয়ে সার্ভিস চার্জ বন্ধ করে অন্যদিকে আবার ইজারা দিয়ে চাঁদাবাজির করার অনুমতি দিয়েছে জানিয়ে তারা বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরশনসহ সারাদেশের সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা রীতিমত ইজারাদার নিয়োগ করে সড়ক-মহাসড়কে পণ্য পরিবহন গাড়ি থেকে চাঁদাবাজি করছে। কোনো রকম পার্কিং বা টার্মিনালের ব্যবস্থা না করেই এই রকম অস্বাভাবিক চাঁদাবাজির কারণে মালিক ও শ্রমিকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, মো. রহিম বক্স দুদুসহ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান, সদস্য সচিব তাজুল ইসলাম প্রমুখ।
Leave a Reply