রাইদা পরিবহনের চালক ও হেলপার গ্রেপ্তার
রাজধানীর প্রগতি সরণিতে রাইদা পরিবহনের একটি বাসে আর্থিক সহায়তা চাইতে উঠেছিল ১০ বছর বয়সী মরিয়ম আক্তার। কিন্তু তাকে নেমে যেতে বাধ্য করেন চালক আর তার সহকারী (হেলপার)। তবে নামার সুযোগ দিতে গাড়ির গতি কমানো হয়নি। চলন্ত বাস থেকেই নামতে বাধ্য হয় মরিয়ম। এতে প্রাণ যায় শিশুটির। মৃতদেহ পড়ে থাকে রাস্তায়। গত মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। এরপর র্যাব সদস্যরা অনুসন্ধান চালিয়ে ওই বাস এবং এর চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তার করলে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।
গত শুক্রবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা দল ও র্যাব-১-এর একটি দল টঙ্গী ও আবদুল্লাহপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাইদা পরিবহনের বাসটি জব্দ করে। পাশাপাশি চালক রাজু মিয়া (২৫) ও হেলপার ইমরান হোসেনকে (৩৩) গ্রেপ্তার করে। গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের কথা জানান সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শিশুটির লাশ মেলে প্রগতি সরণিতে। তখনও পরিচয় মেলেনি। দুপুরের দিকে পরিচয় শনাক্ত হলে জানা যায়, শিশুটির নাম মরিয়ম আক্তার। ওই দিন সকাল সাড়ে ৬টায় স্থানীয় কুড়াতলীর বাসা থেকে বের হয়েছিল সে। পরিচয় নিশ্চিতের পর শিশুটির বাবা পেশায় গাড়িচালক রনি মিয়া বলেছিলেন, মরিয়ম তাদের বাসার অদূরে দাদার বাসায় যেতে বের হয়েছিল।
তবে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব কর্মকর্তারা জানান, দরিদ্র পরিবারের মেয়ে মরিয়ম বাসা থেকে বের হয়ে আশপাশের এলাকায় পথচারী ও দোকানে আর্থিক সহায়তা চাইত। প্রায় প্রতিদিন ভোরে বের হতো। কখনও কখনও ফুলও বিক্রি করত রাস্তায় ঘুরে। যাত্রীবাহী বাসে উঠে লোকজনের কাছে আর্থিক সহায়তা চাইত। ঘটনার দিন সকালেও সে আর্থিক সহায়তার জন্য রাইদা পরিবহনের একটি বাসে উঠেছিল। মরিয়ম স্থানীয় একটি স্কুলে ভর্তি হলেও তা বছর খানেক ধরে বন্ধ ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, শিশুটির লাশ উদ্ধারের পর মৃত্যুরহস্য বের করতে তারা ছায়াতদন্ত শুরু করেন। ঘটনাস্থলের অনেকের কাছ থেকে তথ্য নেন। বাসা থেকে বের হওয়া এবং ঘটনাস্থল পর্যন্ত আশপাশের অন্তত ৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরার দৃশ্য বিশ্নেষণ করে রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়।
তিনি বলেন, রাইদা পরিবহনের বাসটি প্রগতি সরণিতে শিশুটি তাতে ওঠে। চালক ও হেলপারের তথ্যানুযায়ী, মেয়েটি ভিক্ষা করতে উঠেছিল। ওই সময় হেলপার ইমরান যাত্রীদের থেকে ভাড়া তুলছিলেন। তখন তাকে বাস থেকে নেমে যেতে বলে এবং এজন্য চালক রাজুকে গতি কমাতে বলে। এর কিছুক্ষণ আগেই বাসটিকে একবার গতি কমাতে হওয়ায় চালক বিরক্তি প্রকাশ করে। তখন হেলপার নেমে যেতে বললে শিশু মরিয়ম তাড়াহুড়া করে নামতে গিয়ে আহত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মরিয়ম পড়ে যাওয়ার পর হামলা, ভাঙচুরের ভয়ে চালক দ্রুত বাস চালিয়ে ঘটনাস্থল ছেড়ে যায়। ফিরতি যাত্রার সময় জানতে পারে, শিশুটি মারা গেছে। গ্রেপ্তার এড়াতে তখন দু’জনেই আত্মগোপনে চলে যায়।
কমান্ডার মঈন বলেন, বাসের ভেতরে থাকা যাত্রীরা মেয়েটিকে পড়ে যেতে দেখে বাস থামাতে বলেন। কিন্তু পেছনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস থাকায় হামলা ও ভাঙচুরের ভয়ে চালক দ্রুত ঘটনাস্থল ছেড়ে যায়।
Leave a Reply