নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সংসদদে জানিয়েছেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সব জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দেশের নদ-নদীর অবৈধ দখলদারদের তালিকা করেছে। সারাদেশে ৬৫ হাজার ১২৭ জন অবৈধ নদী দখলদার রয়েছে। এ জন্য সারাদেশে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে প্রায় ১৯ হাজার ৮৭৪ জন অবৈধ নদী দখলদারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু অধিবেশনে এসংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন সরকারী দলের সদস্য বেনজীর আহমদ। লিখিত জবাবে প্রতিমন্ত্রী আরো জানান, দেশের বিভিন্ন নদীর তীরভূমি হতে এ পর্যন্ত ২১ হাজার ৪৪৩টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে ৭২৩ দশমিক ৬২ একর তীরভূমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। দেশের নদীসমূহ দখলমুক্ত করতে ২০১০ সাল থেকে অভিযান শুরু করা হয়।
একই প্রশ্নের জবাবে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, নদী দখল রোধে সারাদেশে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম চলছে। নদীর তীরভূমি পুনর্দখল রোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে নদীর উভয় তীরে ওয়াকওয়ে, আরসিসি স্টেপস, বসার বেঞ্চ, বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ, নদীরপাড় বাঁধাই, গাইড ওয়াল নির্মাণ, বৃক্ষরোপন ইত্যাদি কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। ঢাকার চারিদিকে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু ও ধলেশ্বরী নদীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ১১০ কিলোমিটার বৃত্তাকার নৌপথের দুই তীরে অবস্থিত ২২০ কিলোমিটার তীরভূমিতে প্রথম পর্যায়ে ২০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে এবং দুটি ইকোপার্ক নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ে ‘বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে ও আনুষাঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণকাজ চলছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং টঙ্গী নদীবন্দর এলাকায় ৪ হাজার সীমানা পিলার নির্মিত হয়েছে এবং দেড় হাজার সীমানা পিলারের নির্মাণকাজ চলমান।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া রামচন্দ্রপুর হতে বসিলা ও রায়েরবাজার খাল হতে কামরাঙ্গীরচর পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মিত হয়েছে। অবশিষ্ট ৪৮ কিলোমিটার ওয়াকওয়ের মধ্যে ২৭ কিলোমিটার ওয়াকওয়ের নির্মাণকাজ চলছে। ২১ কিলোমিটার ওয়াকওয়ের দরপত্র ৯ নভেম্বর গ্রহণ করা হয়েছে। টঙ্গী নদীবন্দর এলাকায় একটি ইকোপার্ক নির্মিত হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ জানান, তৃতীয় পর্যায়ে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক ‘ঢাকা শহরের চারপাশে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ণ করা হয়েছে। ঢাকা শহরের চারপাশে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে সীমানা পিলার স্থাপন করায় অবৈধ দখল হ্রাস পেয়েছে। সীমানা পিলার স্থাপনকাজ সম্পন্ন হলে অবৈধ দখল সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা হবে।
নদীর গতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে নৌ প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশের নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে, উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের শুকিয়ে যাওয়া ও মৃত প্রায় ৪৭টি নদী ড্রেজিং করে তিন হাজার কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হয়েছে। এছাড়া মোট ৩৮টি ড্রেজার এবং ১৬৮টি ড্রেজার সহায়ক জলযান সংগ্রহ করা হয়েছে। আরো ৩৫টি ড্রেজার সংগ্রহের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
Leave a Reply