প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে শিগগিরই বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সংযোজনের মাধ্যমে তাদের সক্ষমতা বহুলাংশে বাড়ানো হবে। তার সরকার এ বাহিনীকে একটি উন্নত দেশের বাহিনীর মতো দেখতে চায়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিমানবাহিনীর শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ-২০২১ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যশোরের বিমানবাহিনী একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে তার সরকার জাতির পিতার প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করে এর বাস্তবায়ন শুরু করে। বিমানবাহিনীকে একটি শক্তিশালী ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি ইতোমধ্যে বিমানবাহিনীতে সংযোজন করা হয়েছে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, এয়ার ডিফেন্স রাডার, ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জাম। স্থাপন করা হয়েছে নতুন নতুন ঘাঁটি, ইউনিট এবং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন ধরনের বিমান, রাডার ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামের সুষ্ঠু, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী রক্ষণাবেক্ষণ এবং ওভারহোলিংয়ের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সেন্টারের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে বিমানবাহিনী নিজস্ব প্রযুক্তি ও জনবলের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বিমান ও হেলিকপ্টার ওভারহোলিং করছে। মহাকাশ গবেষণা, বিমানবাহিনীর উন্নয়ন এবং বেসামরিক বিমান চলাচল সেক্টরকে যুগোপযোগী করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মাধ্যমে এ দেশেই একদিন বিমান ও হেলিকপ্টার তৈরি হবে বলে তার বিশ্বাস। সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিমানবাহিনীর আধুনিকায়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তখন বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিমানবাহিনীতে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান মিগ-২৯ সংযোজন করা হয়। এজন্য বিএনপি সরকার তার বিরুদ্ধে দুটি মামলাও দেয়। এছাড়া সুপরিসর সি-১৩০ পরিবহন বিমান এবং উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার স্থাপন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমানবাহিনীর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নততর এবং যুগোপযোগী উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ সুনিশ্চিত করার জন্য তার সরকার বিমানবাহিনীতে অত্যাধুনিক ফ্লাই-বাই-ওয়্যার এবং ডিজিটাল ককপিট সংবলিত ইয়াক-ওয়ান থ্রি জিরো কমব্যাট ট্রেইনার, কে-এইট ডব্লিউ জেট ট্রেইনার, এল-ফোর ওয়ান জিরো ট্রান্সপোর্ট ট্রেইনার, এডব্লিউ-ওয়ান ওয়ান নাইন কেএক্স হেলিকপ্টার ট্রেইনার এবং বিভিন্ন ধরনের সিমুলেটর সংযোজন করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর জন্য সার্টিফায়েড টায়ার-থ্রি ডাটা সেন্টার কেনা হয়েছে। শেখ হাসিনা জানান, বর্তমানে এর স্থাপন কাজ চলমান রয়েছে। এই ডাটা সেন্টারের মাধ্যমে বিমানবাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রম প্রথাগত পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পাদন করা সম্ভব হবে। অতি সম্প্রতি বিমানবাহিনীর জন্য কেনা হয়েছে ভিস্যাট হাব ও টার্মিনাল স্টেশন। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সহায়তায় এই ভিস্যাট হাব ও টার্মিনাল স্টেশনের মাধ্যমে বিমানবাহিনীর ঘাঁটি ও ইউনিটসমূহের মধ্যে স্যাটেলাইটভিত্তিক যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে। সশস্ত্র বাহিনীতে নারী সৈনিক অন্তর্ভুক্তিতে আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এ মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজে পুরুষের পাশাপাশি নারী অফিসার ক্যাডেটদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণেও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী পাসিং আউট ক্যাডেটদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ এবং ফ্লাইপাস্ট প্রত্যক্ষ করেন। বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ক্যাডেটদের সোর্ড অব অনার, বিমানবাহিনী প্রধান ট্রফি ও কমানডেন্ট ট্রফি প্রদান করেন। একই সঙ্গে তিনি ফ্লাইং ব্যাজও প্রদান করেন।
Leave a Reply