মাইলেজ ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রাখার দাবিতে ট্রেনের চালকসহ ‘রানিং স্টাফদের’ আজ রবিবার মধ্যরাত থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু হওয়ার কথা। রাত ১২টা থেকে পূর্ব ও পশ্চিম রেলওয়েতে এই কর্মবিরতি শুরু হলে অচল হয়ে পড়তে পারে সারা দেশের রেল যোগাযোগব্যবস্থা। মাইলেজ ব্যবস্থা বাতিল করার প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ। তারা স্টেশনের মূল ভবন থেকে মিছিল বের করে বিভিন্ন প্ল্যাটফরম ঘুরে পুরাতন রেলস্টেশনে গিয়ে শেষ করে।

এদিকে রানিং স্টাফ সংকটের কারণে চট্টগ্রামে গতকাল আরো চার জোড়া ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন জোড়া শাটল ট্রেন ও চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রুটে এক জোড়া ডেমু ট্রেন রয়েছে।
গত মঙ্গলবার থেকে লোকাল ট্রেন ও দূরপাল্লার পণ্যবাহী বিভিন্ন ট্রেনের যাত্রা বাতিল অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে পাঁচ দিন ধরে অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে চলছে যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন। গত রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানা যায়, শুক্রবার চট্টগ্রামের সিজিপিওয়াই থেকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডিতে কনটেইনারে পণ্যবাহী দুটি ট্রেন যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লোকবল সংকটের কারণে ওই দুটি ট্রেন বাতিল করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার সিজিপিওয়াই থেকে ঢাকায় কনটেইনারবাহী দুটি এবং শ্রীমঙ্গল ও রংপুরে একটি করে মোট দুটি তেলবাহী ট্রেন বাতিল হয়েছিল।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রানিং স্টাফদের মধ্যে ট্রেনের চালক (এলএম) ও সহকারী চালক (এএলএম) মিলে বর্তমানে সারা দেশে মঞ্জুরীকৃত পদ রয়েছে এক হাজার ৭৮৬টি। এর মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছে এক হাজার ১৭ জন। এ ছাড়া রানিং স্টাফদের মধ্যে গার্ড ও টিটি পদেও লোকবল সংকট রয়েছে। এসব লোকবল সংকটের মধ্যে চলছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু গত ৩ নভেম্বর মাইলেজ বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর রানিং স্টাফদের সংগঠন দেশব্যাপী আন্দোলন-কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার থেকে আট ঘণ্টার বেশি কাজ না করায় ট্রেন চলাচলে সংকট শুরু হয়।
জানতে চাইলে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান গতকাল বিকেলে বলেন, ‘১৬০ বছর ধরে (১৮৬২ সাল থেকে) মাইলেজ ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু সেটা বাতিল করায় আমরা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে দেখা করে মাইলেজ রাখার দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। আমরা বাধ্য হয়ে আগামীকাল (আজ) ৩০ জানুয়ারি রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যাচ্ছি।’
চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক রতন কুমার চৌধুরী গতকাল বলেন, ‘গত চার দিনের মতো আজকেও আমাদের চার জোড়া ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-ঢাকা, চট্টগ্রাম-সিলেট, চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে সব ট্রেনের চলাচল স্বাভাবিক ছিল।’

জানা যায়, রানিং স্টাফ সংকটের কারণে পাঁচ দিন ধরে যাত্রীবাহী লোকাল ট্রেনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে কনটেইনারবাহী ট্রেন চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে গত শুক্রবার রাতে চারটি কনটেইনারবাহী ট্রেন বন্ধ ছিল। বিষয়টি জানতে গতকাল পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের পাহাড়তলী কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরতরা জানান, একটি কনটেইনার ট্রেন বাতিল হয়েছে। তবে মোট কয়টি বাতিল হয়েছে তা রাতে জানানো যাবে।
মাইলেজ ব্যবস্থা
আন্দোলনকারী সংগঠনের নেতারা জানান, ট্রেনের নির্ধারিত ডিউটি শেষে রানিং স্টাফরা (এলএম, এএলএম, গার্ড ও টিটি) ১২ ঘণ্টা বিশ্রাম পান। কিন্তু রেলে লোকবল সংকটের কারণে ট্রেন চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে ১২ ঘণ্টা কিংবা পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিয়ে তাঁদের আবারও ট্রেন ডিউটিতে যেতে হয়। অথচ ওই ১২ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের ডিউটি করতে প্রশাসন বাধ্য করতে পারবে না। এ কারণে তাঁদের ৫০ মাইলের সমপরিমাণ মাইলেজ ভাতা দেওয়া হয়।
গত ৩ নভেম্বর মাইলেজ ভাতা বাতিল করে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ ভাতা বাতিলের প্রস্তাব করা হলে ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর থেকে বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি নামের সংগঠনটি।
প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করার জন্য সরকারকে আজ ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারতে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল সংগঠনটি। আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে রানিং স্টাফরা গত মঙ্গলবার থেকে ‘আন্ডার রেস্টে’ (বিশ্রামের ওই সময়সীমা) কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়ন করছেন। ওই দিন থেকে এর প্রভাব পড়েছে রেলে।
‘
আজ রেলসচিব কাল রেলমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক’
রানিং স্টাফ ও কর্মচারী শ্রমিক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান গত রাতে কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁদের সঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর আজ বৈঠকে বসবেন। বিকেল ৩টায় রেলভবনে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে রেলওয়ের ডিজিসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকতে পারেন।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে রাতে বলেন, রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজনও আন্দোলনকারী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সোমবার দুপুরে রেলভবনে এ বৈঠক হবে। উৎস : কালের কণ্ঠ।
Leave a Reply