নভো এয়ারের সকালের ফ্লাইটে কক্সবাজার এয়ারপোর্টে নেমেই বাতাসের উত্তাপ টের পাওয়া গেল। আবহাওয়ার রিপোর্টে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস ছিলো। কিন্তু ভ্যাপসা গরমে বেড়ানোর আনন্দটাই যেন মাটি হওয়ার উপক্রম। এয়ারপোর্ট লাউঞ্জের বাইরে বিমানবন্দরটি সমুদ্রের দিকে সম্প্রসারণ প্রকল্পের সাইনবোর্ড টানানো, যেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন। পুরোদমে চলছে কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কাজ।
বিমানবন্দরটির সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন হচ্ছে এর রানওয়ে। অত্যাধুনিক বিমানবন্দরের কাতারে নাম লেখাতে যাওয়া কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে তৈরি হচ্ছে সমুদ্র-ছুঁয়ে। সমুদ্রের নোনা জলের ঠিক ওপরেই উড়োজাহাজটি অবতরণের প্রস্তুতি নেবে। রানওয়ে স্পর্শ করার তিন সেকেন্ড আগে সেটি বিমানবন্দরে প্রবেশ করবে। পৃথিবীর উপকূলীয় শহরে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম হবে এই বিমানবন্দর।

বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে নয় হাজার ফুট দীর্ঘ একটি রানওয়ে রয়েছে। এটি ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত করার কাজ চলছে। এর মধ্যে এক হাজার ৩০০ ফুট থাকবে সমুদ্রের মধ্যে। কক্সবাজার বিমানবন্দরের মহেশখালী চ্যানেলের দিকে জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে সম্প্রসারিত হচ্ছে এই রানওয়ে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর, ৭৪৭-৪০০ ও এয়ারবাসের মতো সুপরিসর উড়োজাহাজ সহজেই ওঠানামা করতে পারবে। প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। যার পুরোটাই অর্থায়ন করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে গতকাল পর্যটন নগরী কক্সবাজারের উন্নয়নে মাস্টার প্ল্যান করার নির্দেশ দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কক্সবাজার এত চমৎকার একটা জায়গা-এটা পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা অপরিহার্য। কক্সবাজারে আমরা অনেক প্রকল্প নিয়েছি। একটা মাস্টার প্ল্যান করার নির্দেশ দিয়েছি পুরো কক্সবাজার ঘিরে। আমরা চাই এর উন্নয়নটা যাতে পরিকল্পিতভাবে হয়।’ কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবনির্মিত বহুতল ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কক্সবাজার বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক করার কাজ চলমান রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরই হবে আন্তর্জাতিক আকাশ পথে রিফুয়েলিংয়ের জায়গা।’

সোমবার সকালে দু’দিনের এক ঝটিকা সফরে কক্সবাজার গিয়ে দেখি, নানা উন্নয়ন কর্মকান্ডের জঞ্জালে এলোমেলো পুরো পর্যটন শহর। সৈকতের ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। সৈকতে পর্যটকদের বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখতে ভাড়ায় লকার সিস্টেম করা হয়েছে। সৈকতের পানি এবং স্থলভাগে বিনোদনের জন্য বিভিন্ন রাইড দেওয়া হয়েছে। এমনটি আকাশে ওড়ারও ব্যবস্থা রয়েছে। আরেকটি নতুন আকর্ষন স্কাই রেস্টুরেন্ট। ঝুলন্ত রেস্তোরায় উড়ে টাকা (খাবার) খাওয়ার ব্যবস্থা। সেখানেও দেখি অনেক ভিড়।

কক্সবাজার বেড়ানোর বড় সমস্যা যাওয়া আসাতেই ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা খরচা হয়ে যায়। আমরা অবশ্য ৫৫ মিনিটে গিয়ে একই সময়ে ফিরে এসেছি। মাঝে বাসা থেকে শাহজালাল এয়ারপোর্ট ১০মিনিট এবং হোটেল থেকে কক্সবাজার এয়ারপোর্ট যেতে ২০ মিনিট লেগেছে। গতকাল সন্ধ্যায় ফেরার পথে দেখি নানা রকম উন্নয়ন কাজ চলছে বিমানবন্দরটিতে। এর আগে হোটেলে চেকআউট করে লাগেজ রেখে কক্সবাজার শহরের বৌদ্ধমন্দির দেখতে যাই। শতবর্ষী এই বৌদ্ধবিহার ‘অগ্গ্যামেধা ক্যাং’ কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরি। ঐতিহ্যবাহী এই বৌদ্ধমন্দিরে এর আগেও গিয়েছি। এবার কোলাহলমুক্ত পরিবেশে কাঠের পাটাতনে বসে কিছুক্ষণ ধ্যানমগ্ন হলাম। ফিরে এসে সোজা এয়ারপোর্টে। ঝটিকা সফর। ভ্রমণসঙ্গীর ২৫তম (আমার সঙ্গে) জন্মদিনটা মনে হয় ভালোই কেটেছে। তবে মাসুলটা বেশি হয়ে গেল। বললেন, এই টাকায় নেপাল-ইন্ডিয়া ঘুরে আসতে পারতাম। আসলেই কক্সবাজার বেশ ব্যয়বহুল পর্যটন এলাকা। আকাশে ওড়ার পর উইন্ডো সাইডে বসে মেঘের ছবি ভিডিও করতে দেখে মনে হলো, ট্যুরটা মন্দ কাটেনি তার।
Leave a Reply