ব্যাটারি তৈরির কারখানা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গড়ে তোলা না হলে সেটি জনস্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। তার ওপর সেখানে যদি পুরনো ব্যাটারি পোড়ানো হয়, তাহলে ক্ষতির মাত্রা হয় খুবই ভয়ংকর।
ব্যাটারি কারখানা ও পোড়ানোর কিছু নিয়ম-কানুন আছে। কারখানা স্থাপন করতে হবে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে; জনাকীর্ণ স্থানের নির্দিষ্ট দূরত্বের বাইরে। আর পোড়াতে হলে ইটখোলার মতো নির্দিষ্ট উঁচু দূরত্বের চিমনি ব্যবহার করতে হবে। কোনোভাবেই এই ধোঁয়া মানুষজন, গাছপালা, ফসল-ফলাদি ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে স্পর্শ করতে পারবে না। কারণ এই ধোঁয়া পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
ব্যাটারি পোড়ানো ধোঁয়ায় পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর সিসার কণা থাকে। এই সিসার কণা ও অন্যান্য মেলাট অক্সাইড ধূলিকণার সঙ্গে মিশে পিএম ২.৫, পিএম ১০—এই ধরনের আকারে রূপান্তরিত হয়ে আমাদের নিঃশ্বাসের সঙ্গে দেহে প্রবেশ করে এবং ফুসফুসে আটকা পড়ে। ফলে শ্বাসকষ্টসহ মানুষের স্মৃতিশক্তি ক্ষয়ে যাওয়া, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, মাথা ব্যথা, ঘুম না হওয়াসহ শারীরিক নানা জটিলতা ও নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। এ ছাড়া এর ক্ষতিকর প্রভাবে গাছপালা ধ্বংস হয়ে যায়, জমির মাটির ফসল উৎপাদনের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। আমি বলব, এসব কারখানা কোনোভাবেই জনবসতি ও স্কুল-কলেজের পাশে করতে দেওয়া উচিত নয়। এটি করা হলে আমাদের কোমলমতি শিশুদের মানসিক বিকৃতি দেখা দিতে পারে। তারা খুব অল্প বয়সেই স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলতে পারে। অন্যরা নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হবে। জমি, ফসল ও গাছপালা নষ্ট হয়ে যাবে।
রিসাইক্লিং ভালো উদ্যোগ। কিন্তু পরিবেশ ও জনগণের স্বাস্থ্য হুমকিতে ফেলে কারখানা স্থাপন ও ব্যাটারি পোড়ানোর কারখানা স্থাপন করতে দেওয়া উচিত নয়।
লেখক : পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক
Leave a Reply