দুই দিনে ৪০২ একক কনটেইনারভর্তি রপ্তানি পণ্য ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়েছে সাতটি জাহাজ। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপো থেকে এসব রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার বন্দরে এনে জাহাজীকরণের কথা ছিল। কিন্তু ৫ জুন থেকে ভয়াবহ আগুন ও বিস্ফোরণের কারণে কনটেইনারসহ পুরো ডিপো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কোনো কনটেইনার বন্দরে যেতে পারেনি। আবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকেও কোনো আমদানি পণ্যের কনটেইনার ডিপোতে আসেনি। এতে বুকিং থাকা এই বিপুল রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার না নিয়েই চট্টগ্রাম বন্দর জেটি ছেড়েছে জাহাজগুলো।
‘এক্সপ্রেস নিলওয়ালা’ জাহাজে ৩৭ একক রপ্তানি পণ্যের বুকিং ছিল, শেষ পর্যন্ত রপ্তানি পণ্যের ২৭ একক কনটেইনার না নিয়েই জেটি ছেড়েছে জাহাজটি। জানতে চাইলে জাহাজটির শিপিং এজেন্ট সি কনসোর্টিয়ামের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মাইকেল রদ্রিগ্রেজ বলেন, জাহাজটি গত ৩ জুন জেটিতে ভিড়ে। আর ৬ জুন এক হাজার ৪০০ একক রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যায়। এই সময়ের মধ্যে না আসায় বাধ্য হয়েই বিএম ডিপোর ২৭ একক রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার না নিয়েই জাহাজটি বন্দর ছেড়ে যায়। এখানে করণীয় কিছুই নেই।

বন্দর সূত্র জানিয়েছে, বিএম কনটেইনার ডিপো থেকে ৫ জুন সাতটি জাহাজে মোট ৪০২ একক রপ্তানি কনটেইনার বুকিং ছিল। এই রপ্তানি পণ্য বিভিন্ন জাহাজে করে প্রথমে কলম্বো অথবা সিঙ্গাপুর যেত। সেখান থেকে বড় জাহাজ বা মাদার ভ্যাসেলে করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা ছিল। জাহাজগুলো হলো মারয়েকস সোংকলা, সিনার সরং, কেপ কোয়েস্ট, এক্সপ্রেস নিলাওয়ালা, এইচ আর সারেরা, ইন্টিগ্রা ও ওয়াইএম হক। সব জাহাজই বিএম কনটেইনার ডিপোর কনটেইনার ছাড়াই গতকাল শিডিউল অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়েছে।
নির্ধারিত সময়ে কনটেইনার জেটিতে না পৌঁছলে জাহাজ শিডিউল অনুযায়ী বন্দর ছেড়ে যাবে। এই ছেড়ে যাওয়ার সময় যে বুকিং কনটেইনার জাহাজ ফেলে রেখে যায় সেটিকে ‘শাটআউট’ বলে। শাটআউট হওয়া জাহাজে বুকিং থাকা কনটেইনারের বেশির ভাগই তৈরি পোশাক শিল্পের পণ্য। রয়েছে চামড়া, পাটজাতসহ অন্যান্য পণ্যও।
জানতে চাইলে সাইফ মেরিটাইম লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ জহীর বলেন, বিএম কনটেইনার ডিপোর যা অবস্থা তাতে সেটি সচল না হওয়া পর্যন্ত কারখানা থেকে তৈরি পণ্য সেই ডিপোতে প্রবেশের সুযোগ নেই। আর ডিপোতে না ঢুকলে বন্দরে নিয়ে জাহাজীকরণের সুযোগও নেই।

তবে যেই বিদেশি ক্রেতা বিএম ডিপো হয়ে কনটেইনার জাহাজীকরণ করতেন, এখন হয়তো বিদেশি ক্রেতার প্রতিনিধি হিসেবে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাররা অন্য কোনো ডিপোর মাধ্যমে সেটি জাহাজে তুলবেন। আর বিএম ডিপোতে থাকা অক্ষত খালি কনটেইনার, পুড়ে যাওয়া কনটেইনার, আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার, রপ্তানি পণ্যের অক্ষত কনটেইনারের পরিণতি কী হবে সেটি নির্ভর করছে সরকারি তদন্ত এবং ডিপো কর্তৃপক্ষের পরবর্তী সিদ্ধান্তের ওপর।
বিজিএমইএর হিসাবে, গত ৬ জুন সন্ধ্যা পর্যন্ত গার্মেন্ট মালিকরা যে হিসাব পাঠিয়েছেন তাতে ২৮ পোশাক কারখানার ৩০ লাখ ৩৩ হাজার ৮৮৪ পিস পোশাক আগুনে পুড়ে গেছে, যার রপ্তানিমূল্য এক কোটি ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫৯৬ মার্কিন ডলার। প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ৯২ টাকা ধরে হিসাব করলে দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০৫ কোটি টাকা। এসব পোশাকের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে এইচঅ্যান্ডএম, টার্গেট করপোরেশন, এমবিএইচ, বেস, ফেম এলএলসি ইত্যাদি।
উৎস : কালের কণ্ঠ।
Leave a Reply