রেলে নতুন নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। বিনিয়োগ হচ্ছে প্রচুর। কিন্তু যাত্রীসেবার মান খুবই খারাপ। রেল এখনো যাত্রীবান্ধব হয়ে ওঠেনি। রেলের শীর্ষকর্তারা কেবল প্রকল্প বোঝেন, যাত্রীর সেবা বুঝতে চান না। কেবল লোকসান গুনেন। নিজের স্বার্থ দেখেন। গতকাল মঙ্গলবার সিরডাপ-এর মিলনায়তনে ‘উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ রেলওয়ে : চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকারসমূহ’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব অভিযোগ উঠে আসে।
সেমিনারে বিশেষজ্ঞ হিসেবে বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, রেলের উন্নয়ন পরিকল্পনায় ঘাটতি আছে। যথাযথ পরিকল্পনা হয় না বলে প্রজেক্টগুলো নিয়ে সুফল পাওয়া যায় না। যাত্রীবাহী ট্রেনের পাশাপাশি মালবাহী ট্রেন পরিচালনা করতে হবে। এ জন্য কনটেইনার ডিপো নির্মাণ করতে হবে।
সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় রেলওয়ে চ্যালেঞ্জের বিষয়ে মতামত প্রকাশ করেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার স্টেকহোল্ডার। তারা বলেন, এত বিনিয়োগ হচ্ছে কিন্তু ট্রেনের যাত্রীরা সেবা পাচ্ছেন না। ট্রেনের বাথরুমগুলোর দিকে তাকানো যায় না। রেলের ভ‚মি বেদখলে, সেগুলো নিয়েও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তারা আরও বলেন, রেলে এখন ব্যাপক লোকবল সংকট। নেই নিজস্ব আইটি বিভাগ। পুরনো রেললাইন। লোকোমোটিভ ও কোচের স্বল্পতাসহ নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে রেলের উন্নয়নে।

সেমিনারে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, প্রকল্প শুধু নেওয়া হয়, কিন্তু সঠিক সময় বাস্তবায়ন হয় না। ফলে বাড়তি খরচ গুনতে হয়। এখানে কী কোনো অনিয়ম হচ্ছে, নাকি কারও দায় আছে, সেগুলোর কোনো জবাবদিহি নেই। তা ছাড়া রেললাইন ও ইঞ্জিন মেরামতের চেয়ে নতুন কেনায় বেশি আগ্রহী। এসব কারণে উন্নয়ন হচ্ছে না রেলওয়ের। আর টিকিট নিয়ে অভিযোগ তো আছেই।
এর আগে রেলওয়ের চ্যালেঞ্জের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) কামরুল ইসলাম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে তিন হাজার ৯৩ কিলোমিটার রেললাইন আছে। যার অধিকাংশই সিঙ্গল লাইন। ফলে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায় না। বেশিরভাগ লাইন ব্রডগেজের আওতায় আসেনি। অনেক রেল সেতু পুরনো, ফলে দ্রæত চলতে পারে না ট্রেন। যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে রেলওয়ের মোডাল শেয়ার ৫ ভাগেরও কম। প্রায় ৬৭ ভাগ লোকোমোটিভ এবং ৪৭ ভাগ যাত্রীবাহী কোচের জীবনকাল অতিক্রান্ত হয়েছে। রেলওয়ের বেশিরভাগ স্টেশন এখনো পুরনো সিগন্যালিং সিস্টেমে রয়েছে। মালামাল পরিবহন অধিক লাভজনক হলেও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়, ফলে আয় বৃদ্ধি সম্ভব হয় না। প্রকল্প বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতার কারণে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। আধুনিক টিকিটিং সিস্টেম জরুরি। রেলে জনবল ঘাটতি ২৪ হাজার ৪৫৯ জন, ফলে বন্ধ আছে ১২৩টি রেলস্টেশন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, রেলে লোকবলের একটা সমস্যা ছিল। সেটি আইনের জটিলতার কারণে নিয়োগ দিতে পারছিলাম না। সেই সমাধান করে এখন লোকবল নিয়োগ দিচ্ছি। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে যাত্রীবান্ধব একটি উন্নত রেলব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, যা অন্যান্য দেশে আছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আইসিটি বিভাগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করে। রেল মন্ত্রণালয়ের চাইলে তাদের আমরা সহযোগিতা করব। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে জবাবদিহি বাড়বে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, সবার পরামর্শ নিয়েই রেলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব আমরা। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে সেমিনারে ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক রেল সচিব সেলিম রেজাসহ আরও অনেকেই।
Leave a Reply