প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শোক
ভারতের ওডিশা রাজ্যে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৮৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ওডিশা ফায়ার সার্ভিস। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওডিশার বালাসোর জেলার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯০০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আজ শনিবার সকালে ওডিশা ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক সুধাংশু সারঙ্গির বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি।
বিবিসি দুজন প্রত্যক্ষদর্শী ও একজন বেঁচে যাওয়া যাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে। গিরিজা শঙ্কর রাঠ নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, মালবাহী ট্রেনটি দাঁড়িয়ে ছিল। ২৩ কামরার করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালগাড়িতে ধাক্কা দেয় এবং ট্রেনটির ইঞ্জিন মালগাড়ির ওপর উঠে যায়। পেছন দিক থেকে শালিমার এক্সপ্রেস নামের যাত্রীবাহী ট্রেনটিও আসছিল। সেটি এসে করমণ্ডল এক্সপ্রেসকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ট্রেনটির দুটি কোচ লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। বিকট শব্দে চারদিক কেঁপে ওঠে। চারপাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়। স্থানীয়রা দুর্ঘটনাস্থলের দিকে ছুটতে থাকে। তিনি বলেন, ‘আমি লাইনের পাশাপাশি ছিলাম এবং ঘটনাস্থলের দিকে দৌড়ানোর সিদ্ধান্ত নিই। আমিসহ অন্যরা আটকে পড়া যাত্রীদের টেনে বের করে আনার চেষ্টা করি। আমরা বেশ কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হই। কয়েকটি মরদেহও উদ্ধার করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে আহত ব্যক্তি ভেতরে আটকা পড়ে। তাদের বের করার উপায় আমাদের জানা ছিল না। উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে আসার পর উদ্ধারকাজ খানিকটা সহজ হয়। সারা রাত উদ্ধারকাজ চলে। আমি এখনো ঘোরের মধ্যে আছি।’
টিটু বিশ্বাস নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমরা বিকট শব্দ শুনতে পাই। বাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখি এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমি দেখি মালবাহী ট্রেনটির ওপর আরেকটি ট্রেন উঠে আছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি অনেক মানুষ আহত, অনেকে মারা গেছে। একটি ছোট্ট শিশু কাঁদছিল। তার বাবা-মা হয়তো মারা গেছেন। শিশুটিও কিছুক্ষণ পর মারা যায়।’ তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষ তখন খাওয়ার পানি চাইছিল। আমি যতজনকে সম্ভব পানি দিয়েছি। আমাদের গ্রামের বাসিন্দারা এখানে হতাহতদের যতটা সম্ভব সাহায্য করছেন। এটি ভয়াবহ ছিল।’
মুকেশ পাণ্ডে নামে ট্রেনের এক যাত্রী বলেন, ‘আমি ট্রেনে ছিলাম। আমরা হালকা ঝাঁকুনি অনুভব করি এবং ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। বজ্রপাতের মতো শব্দ হলো এবং ট্রেনটি উল্টে গেল। আমি আটকা পড়ে যাই। প্রায় ৩০ মিনিট পর স্থানীয় কয়েকজন আমাকে উদ্ধার করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সব জিনিসপত্র বাইরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। পরে আর কিছুই খুঁজে পাইনি। আমি বাইরে এসে মাটিতে বসে পড়ি। আমার গ্রাম থেকে আসা আরও চারজন যাত্রী দুর্ঘটনায় বেঁচে যান। কিন্তু অনেক যাত্রী আহত হয়েছেন, অনেকে এখনো নিখোঁজ রয়েছে। আমি যে কোচে ছিলাম, সেখানের অনেক যাত্রী মারা গেছেন। যাঁরা গুরুতর আহত হয়েছেন তাঁদের ইতিমধ্যে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
Leave a Reply