বাংলাদেশি নাগরিক মো. আব্দুর রহমান ২০২১ সালের ৭ই অক্টোবর সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী এমটি কনসার্টো জাহাজে নাবিক হিসাবে যোগ দেন। হক অ্যান্ড সন্স নামে একটি কোম্পানির মাধ্যমে ওই ট্যাঙ্কার জাহাজ নিয়োগ পান তিনি।
জাহাজটিতে থাকা ২৫ জনের মধ্যে একজন কোরিয়ান নাগরিক ছিলেন। বাকি ২৪ জন ছিলেন বাংলাদেশি।
যোগদানের কিছুদিন পরই পরিবারের সদস্যদের মি. রহমান জানান, জাহাজে কয়েকজন সহকর্মীর সাথে তার মনোমালিন্য হয়েছে। ঘটনাটি এক পর্যায়ে ঝগড়া ও হুমকির পর্যায়ে চলে যায়। পরিবারের পরামর্শে তখন জাহাজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন মি. রহমান। একইসাথে জাহাজ থেকে তাকে নামিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। পরিবারের সদস্যদের কিছুদিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরে যাবেন বলে জানান মি. রহমান।
২০২২ সালের পহেলা জুন জাহাজটি থেকে ফোন করে মি. রহমানের পরিবারের সদস্যদের জানানো হয় যে তাকে অচেতন অবস্থায় ডেকে পাওয়া গেছে।
অনেক খোঁজাখুঁজির পরে তাকে পাওয়া গেছে এবং বিষাক্ত গ্যাসের কারণে তিনি মারা যেতে পারেন বলেও জানানো হয় তখন। সে সময় জাহাজটি তাইওয়ানের জলসীমায় ছিল। চীনের একটি বন্দরে যাচ্ছিল এটি।
মি. রহমানের ভাই মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হালিমুর রশীদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ঘটনা জানার পর জাহাজের দায়িত্বে থাকা ক্যাপ্টেন শামীম পারভেজের কাছে জানতে চাইলে বিষাক্ত গ্যাসের কারণে মারা গেছে জানায়। ডিউটিরত অবস্থায় খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি বলে জানায়। কিন্তু সে যেখানে কাজে গেছে সেখানে ডিউটি অফিসারের আদেশেই গেছে।”
মি. রশীদ দাবি করেন, জাহাজ কর্তৃপক্ষ তার মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল তৈরি করে। কারণ ডিউটিতে থাকলে কর্তৃপক্ষ জানার কথা সে কোথায় কিন্তু মি. রহমানকে কর্তৃপক্ষ খোঁজাখুজি করার মিথ্যা কথা বলেছে বলে দাবি করেন তিনি। “একবার বলছে মাথায় আঘাতজনিত কারণে, আরেকবার বলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অসুস্থতাজনিত কারণে মারা গেছে, একেকবার একেক ধরনের কথা বলেছিল তারা,” বলেন মি. রশীদ।
২০২২ সালের ৬ই জুন জাহাজটি দক্ষিণ কোরিয়ার ইওসু বন্দরে পৌঁছে কোরিয়ান জাহাজ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির কাছে লাশটি হস্তান্তর করে।
পরে মরদেহটি স্থানীয় ইওসু চেননাম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে ময়নাতদন্ত করতে নিয়োগকারী এজেন্সিকে বলা হলেও ৪০ দিন পর ওই বছরের ১০ই জুলাই মরদেহটি বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
সেদিন বিমানবন্দর থানা লাশ গ্রহণ করে একটি অপমৃত্যুর মামলা করে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়।
Leave a Reply